বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
বিদায় মাহে রমজান

ঈদ আনন্দ আসুক সবার জন্য

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নাজাতের দিনগুলো ফুরিয়ে এলো। সায়েমের দরজায় কড়া নাড়ছে খুশির ঈদ। ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে মুসলমানদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ তোহফা ঈদ উৎসব। পৃথিবীর অধিকাংশ জাতির উৎসবের আনন্দ শুধু বিনোদন কেন্দ্রিক। কিন্তু মুসলমানদের উৎসবের জন্য যে দুটি দিন দিয়েছে, তাতে রয়েছে আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি এক মহান বার্তা। অসাধারণ শিক্ষা। প্রতিটি মুসলমানের জন্যই ঈদ অনাবিল আনন্দ ও সুখের সময়। মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে উৎসবের দিন। মুসলিম উম্মাহর উৎসবের দিন হচ্ছে ঈদের দিন। কেন এ ঈদ উৎসব? এর কারণ হল, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে একজন মুসলমান প্রকৃত মানুষ হওয়ার, আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির, মাগফিরাত লাভ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি অর্জনের যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই প্রচেষ্টারই একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হচ্ছে খুশির ঈদ। ঈদুল ফিতরের উৎসবের দিন সাত-সকালে মিষ্টিমুখ করার সুন্নত বিধান রয়েছে। নিজের পরিবারসহ আÍীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাইকে এ আনন্দঘন মুহূর্তে অংশীদার করে নেওয়ারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে শরিয়তে। অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঈদের নামাজ আদায়ের আগে ফিতরা দিয়ে তাদের ঈদের আনন্দে অংশগ্রহণ করানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। ঈদের দিন আমির-ফকির সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয় দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ। খুতবা শোনা একটি অপরিহার্য বিষয়। এদিন দান-খয়রাত করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগের রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার কথা বলা হয়েছে সহিহ হাদিসে। একই সঙ্গে ঈদের জামাতে যাতায়াতকালে, খুতবার সময় তাকবির ধ্বনি দিতে হাদিসে বলা হয়েছে। ঈদুল ফিতর নেক বান্দাদের জন্য খুশির দিন। যারা রোজা পালন করেছেন, তাদের জন্য আরও বেশি আনন্দ ও উৎসবের দিন ঈদুল ফিতর। সাহাবি হজরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রা.) ঈদের দিন কাঁদছিলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আজ খুশির দিন ওই ব্যক্তির জন্য, যার রোজা কবুল হয়েছে। ঈদুল ফিতরের দিন হল পুরস্কার লাভের দিন। এদিন এক দল ফেরেশতা দাঁড়িয়ে যান এবং বলতে থাকেন, হে প্রশান্ত বান্দা তোমরা দয়াময় প্রভুর দিকে ছুটে চল। তিনি তোমাদের কল্যাণ দান করবেন। তিনি তোমাদের পুরস্কার  দেবেন। ঈদকে একটি পবিত্র উৎসব হিসেবে পালন করতে হবে। এর সুন্নত তরিকা হল ঈদের নামাজের আগে গোসল করে নেওয়া, পরিষ্কার পোশাক পরে আতর-সুগন্ধি মেখে ঈদগাহে যাওয়া, সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হলে ঈদের নামাজের আগে তা আদায় করে দেওয়া, হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া, সম্ভব হলে এক রাস্তায় যাওয়া, অপর রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টিমুখ করে নেওয়া, ঈদগাহের দিকে ধীরস্থিরভাবে যাওয়া, নামাজ শেষে আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করা, ঘরে ফিরে চার রাকাত নফল নামাজ পড়া। মুমিন মুসলমানের ঈদ হোক আনন্দের। যারা গরিব তাদের ঈদও যেন আনন্দের হয় সেই ব্যবস্থা করা জরুরি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।
লেখক, বিশিষ্ট মুফাচ্ছিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর