বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

‘গোল্ডেন বয়’ সৌম্য

‘গোল্ডেন বয়’ সৌম্য

নামের সঙ্গে চেহারার অদ্ভুত এক মিল সৌম্য সরকারের। চলনে-বলনে সৌম্য শান্ত, ধীর। চেহারায় নিপাট এক ভদ্রলোক। নিরীহ গোবেচারা অবয়বের সৌম্যকে দেখলে মনে হয় কোনো কলেজের অধ্যাপক। অথচ মাঠের বাইরের আর মাঠের ভিতরে সৌম্য কিন্তু একেবারেই ভিন্ন চেহারার। ব্যাট হাতে এতটাই আক্রমণাত্মক, এতটাই নির্মম, এতটাই নির্দয় যে, প্রতিপক্ষ বোলারদের নাভিশ্বাস ওঠে প্রতিনিয়ত। সাতক্ষীরার ২৩ বছর বয়সী তরুণ সৌম্য কতটা আগ্রাসী, কতটা আক্রমণাত্মক ব্যাট হাতে, টের পেলেন প্রোটিয়া বোলার কাগিজো রাবাদা, অ্যাবট, ইমরান তাহিররা। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে প্রোটিয়া বোলারদের যেভাবে তুলাধোনা করেছেন, নিকট অতীতে এমন বিধ্বংসী মেজাজে দেখা যায়নি বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানকে। এতটাই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স সৌম্যর, আদর করে ‘গোল্ডেন বয়’ বলাই যায়!
মাস্টারদা সূর্যসেনের শহর চট্টগ্রামে কাল ছিল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। ছিল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের ম্যাচ। স্বপ্ন পূরণের ম্যাচে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে সৌম্য স্বপ্ন পূরণ করেন ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর। উপহার দেন সিরিজ। নিজের কীর্তিটাকেও নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। সিরিজ নির্ধারণী কার্টেল ওভারের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯ উইকেটের যে স্বপ্নের জয় পায় বাংলাদেশ, তাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বাঁ হাতি তরুণ। ৯০ রানের ম্যাচজয়ী যে ইনিংসটি খেলেন, তার জন্য খরচ হয়েছে মাত্র ৭৫ বল, যা সাজানো ছিল ১৩টি বাউন্ডারি ও ১ ওভার বাউন্ডারিতে। শুধু কালই নয়, আগের ম্যাচেও ছিলেন দুর্ধর্ষ। ৭ উইকেটের জয়ী ম্যাচে খেলেছিলেন ৮৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। তবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে তার ব্যাট হাসেনি বলে হাসেনি বাংলাদেশও। সিরিজে তিন ম্যাচে টানা দুই হাফসেঞ্চুরিসহ রান করেন ২০৫। সবাইকে ছাড়িয়ে গগনচুম্বি পারফরম্যান্সে হয়েছেন সিরিজসেরাও। ১৬ ম্যাচ ক্যারিয়ারের শুরুটা চমকে ভরা সৌম্যর। গত ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। মাত্র ২০ রানের অভিজ্ঞতা নিয়ে উড়ে যান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। অবিশ্বাস্য না হলেও পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশের মাটিতে খেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে পারেননি। কিন্তু শেষ ওয়ানডেতে ছিলেন দুর্বার। পাকিস্তানের বিশ্বসেরা বোলিংকে দুমড়ে মুচড়ে খেলেন ১২৭ রানের হার না মানা ইনিংস। সৌম্য এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে ধারাবাহিক। ১৬ ম্যাচে মাত্র একবার দুই অঙ্কের রান পাননি সৌম্য। এ ছাড়া প্রতিটি ম্যাচেই তার ব্যাট হেসেছে। সেই সঙ্গে হেসেছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। তবে দ্রুত সে জায়গা যদি নিজের করে নেন সৌম্য, তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
 

সর্বশেষ খবর