শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিদায় বন্দী জীবন

বিদায় ভারত বিদায় ছিটমহল। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ১১১ ছিটমহলের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বিদায় জানালেন ভারতকে। সেই সঙ্গে চিরতরে বিদায় নিয়ে ডিকশনারির পাতায় চলে গেল ছিটমহল শব্দটি। শব্দটি নিয়ে এখন আর কেউ বর্তমানের কথা লিখবেন না। ছিটমহল মানেই এখন একটি বিবর্ণ ইতিহাস। সেই সঙ্গে শব্দটির বেড়াজালে আটকে পড়া হাজারো মানুষের মুক্তির ইতিহাস। প্রায় ছয় যুগ তারা বন্দীখাঁচায় অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত লাল-সবুজ পতাকার দেশের নাগরিক হয়ে উঠলেন। সারা দিন সারা রাত তাই বাংলাদেশের ১১১ ছিটমহলে বয়ে গেছে আনন্দের বন্যা। ঘরে ঘরে ছিল আনন্দ উদ্যাপনের নানা আয়োজন। ছিটমহলের অধিবাসীরা বুক ভরে তাই নিয়েছেন নিঃশ্বাস। আর কোনো বঞ্চনা তাদের সইতে হবে না। কোন দেশে বাড়ি তোমার, কোথায় তোমার দেশ- জিজ্ঞেস করলে মাথা উঁচু করে বলবেন- বাংলাদেশ। এ আনন্দ অনুভূতি যেন ব্যাখ্যা করার নয়। মুক্ত স্বাধীন দিনের জন্য কত রাত গেছে নির্ঘুম। ছিটমহলের অধিবাসী বলে অবমাননায় কালের গহ্বরে ডুবে গেছে মনোকষ্টের বহুদিন। তাই মধ্যরাতের অপেক্ষা সইছিল না ছিটমহলবাসীর। শুক্রবার সকালেই অনেক বাড়ির আঙিনায় উড়েছে বাংলাদেশের পতাকা। গারাতী ছিটমহলের সদ্য প্রতিষ্ঠিত মুজিব-ইন্দিরা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বসেছিল মেলা। শিশুরা নতুন জামা-কাপড় পড়ে মেলায় গেছে। সঙ্গে ছিলেন বাবা-মা। এমন আনন্দ কোনো দিন আসেনি জীবনে তাদের। মেলায় খেলাধুলার আয়োজন ছিল। ছিটমহলবাসীর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে জেলার নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে গেছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলার কাজলদিঘী দিনবাজারেও মেলা বসেছিল।
 সারা দিন সেখানেও হাজার হাজার মানুষ জড় হয়েছে। লাঠিখেলার আয়োজন ছিল সেখানে। গারাতী ছিটমহলে সারা দিন খেলাধুলার আয়োজন ছিল। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর নাটক। আর কিছু দিন পরই ভারতে চলে যাবেন গারাতী ছিটমহলের রত্না রায়। মেলায় এসেছেন উৎসবে। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশের হয়ে শেষ আনন্দ। ও দেশে সবাই আছে তাই চলে যাচ্ছি।’ পঞ্চগড়ের বিদ্রোহী শিশু কিশোর থিয়েটার মঞ্চস্থ করে ছিটমহলের ওপর নাটক ‘মানবতার মুক্তি’। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন রহিম আবদুর রহিম। রাত ১২ টা ১ মিনিট। ভরা বুক আলো নিয়ে আকাশে ভাসছে চাঁদ। ছিটমহলবাসীর আনন্দ, শিশুদের চিৎকার আর মেঘমাখা জোছনা ভেদ করে তখন আকাশে উড়তে থাকে বেলুন। ঘরে ঘরে মোমবাতি আর প্রদীপ জ্বলে ওঠে। রাস্তায় রাস্তায় আলো ছড়িয়ে দেয় মশাল। সেই সঙ্গে বদলে গেল বাংলাদেশের মানচিত্র। ১৬ কোটি মানুষের জীবনের সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হলেন পঞ্চগড়ের ১৮ হাজার ৮৩৪ জন মানুষ। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে থাকা মানুষের সঙ্গে সমতা আনতে হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু তাদের দাবি উন্নয়ন প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হোক।

সর্বশেষ খবর