শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

‘মোর কবর যেন স্বাধীন ছিটমহলেই হয়’

স্বভাব যায়, অভাব যায় না। অভাবের তাড়নায় কাজের সন্ধানে ভারতে যাওয়া বাহে। ভারত যাবার জন্যে নাম লেখাইলং। এ্যালা যাবার না মনায়। বাপ-দাদার ভিটা ছাড়ি গেইতে মন কান্দে। এই দ্যাশত বড় হইলং, পাড়া প্রতিবেশী, সাগাই সোদর (আত্মীয়স্বজন) সগায় হ্যামার এ্যাটে (এইখানে)। ওমাক (ওদের) ছাড়ি যাবার না মনায়। মোক ছাড়ি সগায় যারার সিদ্ধান্ত নিছে বাহে, সগায় গেইলেও মুই না যাইম বাহে, মোর কবর যেন এই স্বাধীন ছিটমহলেই হয় বাহে, আল্লার কাছে মুই এইটাই চাং। এভাবে ভারাক্রান্ত মনের কথা গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বললেন দেশের বৃহত্তম ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার বোর্ডের হাটের বৃদ্ধ কাশেম আলী (৭২)। পরিবারের ১৪ সদস্যকে নিয়ে তিনি ভারত যাবার অপশন বেছে নিয়েছেন।  কৃষি মজুর কাশেম আলীর বাপ-দাদার বাস কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত এই ছিটমহলে। তিন ছেলে এবং এক মেয়ে তার। স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউসহ ১৪ সদস্যের একান্নবর্তী পরিবার। ১৪ সদস্যের জন্য সাড়ে ১৬ শতক জমির একমাত্র বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। ছেলেরা সবাই দিন মজুর। দিন মজুরির কাজে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটে কাজ করার ফাঁকে এক সময় পাড়ি জমান দিল্লি, হরিয়ানায়। সেখানে বেছে নেন কাজ। একপর্যায়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে যান কর্মক্ষেত্রে। বছরে ছয় মাস দালালের মাধ্যমে বাড়ি যাওয়া আসা করেন। এভাবেই চলছিল তাদের দিন। জরিপে পরিবারের সবাই  ভারতে যাওয়ার অপশন দেন। পুরো পরিবার না হলেও কাশেম আলীর মন শেষ সময়ে বিষাদে ভরে ওঠে। সবাই চাইলেও তিনি ভারতে যেতে চান না। তার পরিবারের সবাই চলে গেলেও তিনি আর ভারতে যাবেন না। তার আশা এখানেই তার যেন মৃত্যু হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি আর বাস্তুভিটা ছেড়ে যেতে চান না। ভারতে যাওয়ার অপশনে সই করে বড় বিপাকে পড়েছেন তিনি। কেঁদে কেঁদে  বৃদ্ধ কাশেম বলেন, কাগজোত সই করিছুং তাতে কি হইছে, মুই যদি না যাং, কেউ কি মোক নিবার পাইবে। কাশেম আলীর স্ত্রী জরিনা বেগম (৬৩) জানান, ভারতে যাওয়ার নাম লেখেয়া ওমরা (উনি) চিন্তায় পইড়ছে। একলায় একলায় থাকে। এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, যদি কেউ অপশনে সই করে এখন  সিদ্ধান্ত বদলান, তাহলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবে দুই দেশের সরকার।

সর্বশেষ খবর