বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গুলশান-বারিধারার ‘হট স্পটে’ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

সাখাওয়াত কাওসার

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুজন বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ায় রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। গুলশান ও বারিধারার ২০৩টি স্থানকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। ১৮টি চেকপোস্টে ২৪ ঘণ্টা তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নি-িদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে থানা-পুলিশ, এপিবিএন, এসপিবিএনের ৬৪টি পেট্রোল টিম। এ ছাড়া ৪৬টি দূতাবাসের সিসিটিভি পুলিশের সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশের সার্ভারে নেই এমন বিভিন্ন ভবনের ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়মিতভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে সরকারের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকের পর কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে গৃহীত নিরাপত্তাব্যবস্থায় সন্তুষ্টিও প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিপ্লোমেটিক জোনের দায়িত্বে থাকা চেন্সারি পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নি-িদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বাইরেও ভবনের সামনের রাস্তা সিসিটিভির আওতায় আনার জন্য গুলশান এলাকায় ভবন মালিকদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের অনেকেই এতে ইতিবাচক সম্মতি দিয়েছেন। গতকাল গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাতির ঝিল, গুলশান-১, মহাখালী সড়ক, বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ ও গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে কয়েকটি অস্থায়ী নতুন চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তল্লাশি করা হচ্ছে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। এ ছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে পুলিশের পাহারা। সন্দেহভাজন মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার তল্লাশি করছে পুলিশ। গুলশানের কূটনীতিক পাড়ার আশপাশে র‌্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। পোশাকে ও সাদা পোশাকে সার্বক্ষণিকভাবে টহল দিচ্ছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কূটনীতিক পাড়ায় আগের নিরাপত্তাব্যবস্থার বাইরে বর্তমানে পোশাকধারী ১৫টি চেকপোস্ট, নয়টি ফুট পেট্রোল, ১০টি মোবাইল পেট্রোল, ১৬টি মোটরবাইক পেট্রোল, আটটি পিকেট পেট্রোল, চারটি স্কুল প্রটেকশন পেট্রোল নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এর বাইরে কাজ করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১৩টি মোটরবাইক পেট্রোল এবং স্পেশাল সিকিউরিটি ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) পেট্রোল। এ ছাড়া কূটনীতিক পাড়া ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় চেন্সারি পুলিশের সাড়ে ৭০০ জনবল ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। বিদেশিরা অবস্থান করেন প্রতিটি ফাইভ স্টার হোটেলসহ উন্নত মানের আবাসিক হোটেলগুলোর চারদিকে মোবাইল পেট্রোল রাখা হয়েছে। প্রতিটি চেকপোস্টে একজন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে গুলশান এলাকায় প্রতিটি বিদেশি ক্লাবের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য চারটি পেট্রোল রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম। সূত্র জানায়, গুলশান, নিকেতন, বনানী ও বারিধারার কূটনীতিক পাড়ায় পুলিশের উদ্যোগে বেসরকারি অর্থায়নে বসানো হয়েছে ১০৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা। বারিধারায় অবস্থিত ৪৬টি দূতাবাসে তাদের নিজস্ব সিসিটিভি পুলিশের সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও অফিসে বসানো রয়েছে আরও হাজার খানেকের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। এ ছাড়া আইপি ক্যামেরার ধারণকৃত সন্দেহজনক ফুটেজগুলো নিয়মিত সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছেন গোয়েন্দারা। শিগগিরই নাইট ভিশন ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নিকেতন সোসাইটির কর্মকর্তারা। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহ্মুদ খান বলেন, র‌্যাব অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে গুলশান এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান ৯০ নম্বর সড়কে ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে ১৩ জানুয়ারি রাতে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের পাশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এ দুই ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সিসি ক্যামেরার যে ফুটেজ সংগ্রহ করেছে, তা ছিল অস্পষ্ট। দুটি ঘটনাতেই মোটরসাইকেলে চড়ে আসা ঘাতকরা গুলি ও হামলা করে পালিয়ে যায়। পুলিশ ও গোয়েন্দারা এখনো তাদের শনাক্ত করতে পারেনি। এর আগে ২০১২ সালের ৫ মার্চ সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয় গুলশানে।

সর্বশেষ খবর