বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অবরোধে পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ৭

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

মেডিকেল ভর্তিচ্ছুদের বিক্ষোভ

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সম্প্রতি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে আবারও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলে এ অবরোধ। অবরোধ শেষে স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘেরাও করতে যাওয়ার সময় পুলিশের লাঠিপেটায় সাত ভর্তিচ্ছু আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া পুলিশ এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, রাস্তা অবরোধ করে অযৌক্তিকভাবে আন্দোলন করে কোনো লাভ নেই। ফল বাতিল হবে না। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।

এদিকে মেডিকেলে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা এবং প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে সারা দেশে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়েছে। ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। একই দাবিতে আজ সকাল থেকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আবারও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেডিকেলে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বেলা ১১টা থেকে অবস্থান শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা নতুন করে ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে নানা স্লোগান দেন। সেখান থেকে দুপুর ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তারা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলে অবরোধ। অবরোধের কারণে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

অবরোধ শেষে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘেরাওয়ের উদ্দেশে রওনা হন। মিছিলটি কারওয়ান বাজার পর্যন্তু গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ কিছু ভর্তিচ্ছুকে লাঠিপেটা করে। এতে সাতজন আহত হন। তাদের মধ্যে তানভীর নামের এক আন্দোলনকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে লাঞ্ছনার অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের সমন্বয়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, পুলিশের লাঠিপেটায় আমাদের সাতজন আহত হয়েছেন। যতই নির্যাতন-নিপীড়ন হোক না কেন আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না। তবে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়নি দাবি করে পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে পুলিশ অত্যন্ত নমনীয় ছিল। তাদের লাঞ্ছিত বা লাঠিচার্জ করা হয়নি। বরং বুঝিয়ে শহীদ মিনারের দিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এদিকে একই দাবিতে গতকাল সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়েছে। প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐক্যমঞ্চের আহ্বানে এ ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, কার্জন হল, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদসহ বিভিন্ন ভবনে তালা লাগিয়ে দেন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ সময় ধর্মঘটের সমর্থনে বাম সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে দুপুর দেড়টার দিকে জাদুঘরের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করে ১২ অক্টোবর সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন তারা।

আন্দোলনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করা এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। রাস্তা অবরোধ করে অযৌক্তিকভাবে আন্দোলন করে কোনো লাভ নেই। এ আন্দোলনের পেছনে নিশ্চয়ই উসকানিদাতা রয়েছে। আমরা আগেই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। মেডিকেলে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর