বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রহস্যাবৃত দুই বিদেশি খুন

বিশেষ প্রতিনিধি

রহস্যাবৃত দুই বিদেশি খুন

রহস্যাবৃত রয়ে গেছে ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার ও জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা মামলা। আলোচিত এ দুটি হত্যাকাণ্ড কেন এবং কারা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য আজ পর্যন্ত উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর গুলশানে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর তারা বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে কী তথ্য পেয়েছে সে সম্পর্কে গণমাধ্যমকে কিছুই জানায়নি। রংপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে গণমাধ্যমকর্মীদের কোনোভাবেই সহায়তা করছেন না সংশ্লিষ্টরা। মামলার আসামি বিএনপি নেতা রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লব ও ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির হীরাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। হত্যার বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দিয়েছেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশ কর্মকর্তারা। বিপ্লব ও হীরাকে সোমবার হোশি কোনিওর হত্যা মামলায় আসামি দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। শনিবার কোনিও খুন হওয়ার পরপরই তাদের আটক করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামুনুর রশীদ মামুন জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ায় বিপ্লব ও হীরাকে ওই মামলার আসামি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এদিকে চার সদস্যের জাপানি প্রতিনিধি দল গতকাল সকালে কড়া পুলিশ প্রহরায় রংপুর জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মালেকের সঙ্গে হোশি কোনিও হত্যা মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছুই বলছেন না পিপি মালেক। এদিকে ময়নাতদন্তের দুই দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল পর্যন্ত কোনিওর লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক বিমলকুমার বর্মণ। রবিবার ময়নাতদন্ত শেষে কোনিওর লাশ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সোমবার রাতে জাপান প্রতিনিধি দল হিমঘরে কোনিওর লাশ পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ ও আলামত সংগ্রহ করে বলে জানান রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন। জাপান প্রতিনিধি দল কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে। তারা কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন সে ব্যাপারেও কোনো তথ্য দিচ্ছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা। এমনকি তদন্তের অগ্রগতি এবং হত্যার ক্লু পাওয়া গেছে কিনা, এসব ব্যাপারেও মুখ খুলছেন না তারা। সব পুলিশ কর্মকর্তার মুঠোফোনে কল করলেও তারা রিসিভ করছেন না। গতকাল বিকালে হঠাৎ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীনকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, কোনিও হত্যার বিষয়ে কোনো কথা তিনি বলবেন না। এ ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি। শনিবার সকালে রংপুর নগরী থেকে রিকশায় করে কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন হোশি কোনিও। একই গ্রামে ২ একর জমি ইজারা নিয়ে জাপানি কোয়েল ঘাসের চাষ করতেন তিনি। তার ঘাসের খামারসংলগ্ন মাছের খামার রয়েছে হুমায়ুন কবির হীরার। নগরীর মুন্সিপাড়ায় জাকারিয়া বালার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কোনিও। তিনি নিহত হওয়ার পরপরই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাকারিয়া বালা, তার শ্যালক হুমায়ুন কবির হীরা, রিকশাচালক মোন্নাফ আলী, যে বাড়ির সামনে নিহত হন কোনিও সেই বাড়িওয়ালার ছেলে মুরাদ হোসেন, রংপুর মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকু এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ভাই রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লবকে আটক করে। এদের মধ্যে বিপ্লব ও হীরাকে ওই মামলায় আসামি দেখানো হলেও অন্য চারজনকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, নাকি মামলায় আসামি করা হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা। হত্যার রহস্য উন্মোচনের পুরো বিষয়টি অতি গোপনীয়তার সঙ্গে চালানো হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর