সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কাজে যাচ্ছে না বিদেশিরা

জুলকার নাইন

কাজে যাচ্ছে না বিদেশিরা

ঢাকার বাইরে নিয়মিতই বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে যেতে হয় বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশি উন্নয়ন-সহযোগীদের কর্মকর্তাদের। কিন্তু ভ্রমণ সতর্কতা জারির পরের উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে এ ধরনের সফরগুলো গতকাল পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন বিদেশি কর্মকর্তারা। ঢাকার বাইরে নিয়োজিত থাকা কিছু পশ্চিমা নাগরিককে নিয়ে আসা হয়েছে রাজধানীতে। এর মধ্যে আছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরাও। প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়নি। বরং সর্বশেষ ব্রিটিশ হাইকমিশন ও মার্কিন দূতাবাসের সতর্কবার্তা হালনাগাদ করা এ পরিস্থিতিকে দীর্ঘায়িতই করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থা ইউএসএইডের এক কর্মকর্তা জানান, কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। চলাফেরার ক্ষেত্রে থাকতে বলা হয়েছে সতর্ক। এসব কারণে পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকার বাইরের কর্মসূচিগুলো আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে জরুরি সব কাজই করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া এইডে কর্মরত অপর এক কর্মকর্তা জানান, যেখানে সদর দফতর ও দূতাবাস থেকে সতর্কতা বজায় রাখতে বলা হচ্ছে এবং দুজন বিদেশি নাগরিক খুনের ঘটনাও ঘটেছে, তাই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ তো রয়েছেই। আবার বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় বসবাস করা বিশ্বব্যাংকের অপর এক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলেন, বাসার আশপাশে রীতিমতো বিশেষ বাহিনীর প্রহরা দেওয়া হচ্ছে। নিশ্চয়ই ঢাকার বাইরে এ ধরনের ব্যবস্থা থাকবে না। আবার দূতাবাসগুলোও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সে কারণে বিদেশি কর্মকর্তাদের ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে কোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে ফেলার ঝুঁকি নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে স্থানীয় কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিচ্ছেন বলে জানান বিশ্বব্যাংকের এ কর্মকর্তা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের সিদ্ধিরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও খুলনার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪১ বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তারা গতকাল পর্যন্ত এসব কর্মস্থলে যোগ দেননি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দ্রুত কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। স্পেনের আইসোল্যাক্স নামের এ কোম্পানিতে কর্মরত স্প্যানিশ, বুলগেরিয়া ও আর্জেন্টিনার নাগরিকরা সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট, ৩৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিবিয়ানা-১ এবং খুলনা ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের নির্মাণকাজে নিয়োজিত ছিলেন। ৫ অক্টোবর পিডিবিকে লেখা এক চিঠিতে কোম্পানিটি ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাদের ৪১ জন বিদেশি কর্মীকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারা আবার কাজে ফিরে আসবেন বলে চিঠিতে আইসোল্যাক্স জানায়। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে ১৩ অক্টোবর এই বিদেশিদের দ্রুত কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলে একটি চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের মাঝপথে এভাবে চলে যাওয়া চুক্তিভঙ্গের শামিল। নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তারা কাজে যোগ দেননি। বরং সূত্রের খবর, সেই ৪১ বিদেশির বেশির ভাগই দেশ ত্যাগ করেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সেপ্টেম্বরের শেষার্ধে বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনায় হামলার আশঙ্কায় তখন বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ কয়েকটি দেশের সদর দফতর। এরই মধ্যে দুই বিদেশি নাগরিকের খুনের ঘটনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটনায়। একে একে সতর্কবার্তা জারি করে জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ। সরকারের পক্ষ থেকে সব বিদেশির নিরাপত্তা জোরদার করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। কিন্তু ৯ অক্টোবর আবার নির্বিচারে হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে লন্ডন থেকে সতর্কবার্তা হালনাগাদ করা হয় বাংলাদেশে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য। এরপর অন্য কোনো দেশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা হালনাগাদ করা না হলেও সর্বশেষ শনিবার রাতে মার্কিন নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা বার্তা দেওয়া হয় আবার। এতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ভ্রমণরত কিংবা অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া, নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিবর্তনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ জুড়ে ভ্রমণের সময় দূতাবাসের কর্মীরা সতর্কতামূলক নিরাপত্তার নিয়ম অনুসরণ করতে থাকবেন। এ ছাড়া এতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জনসমাগম স্থলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি হেঁটে, মোটরসাইকেলে, সাইকেলে কিংবা কোনো ধরনের খোলামেলা বাহনে চলাফেরা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজে যাচ্ছেন না বিদেশিরা :পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন কোনো তথ্যের ভিত্তিতে সতর্ক বার্তা দেয়নি। দেশের পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোনো দেশ নতুন করে কোনো তথ্য শেয়ারও করেনি। বিদেশিদের জন্য সরকার নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। সরকারি নিরাপত্তায় বিদেশিরা নিরাপদবোধ করছেন। গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়কালে তিনি এসব কথা বলেন। বিদেশি হত্যাকাণ্ড ও বিভিন্ন দেশের উদ্বেগের বিষয়ে সরকারের মন্ত্রীরা ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, এটি তাদের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সতর্ক বার্তায়ও দুই বিদেশি খুনের ঘটনায় আইএসের কথা এসেছে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তারা বলেছে তারাই খতিয়ে দেখুক। সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশের জারি করা সতর্কতা উঠছে না কেন, এতে কি ওই দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি হয়েছে-এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এরকম কিছু না।

 

 

 

সর্বশেষ খবর