সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপির এবার লবিস্ট ফার্ম

২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু * আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নসহ তুলে ধরছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যু

জুলকার নাইন ও মাহমুদ আজহার

বিএনপির এবার লবিস্ট ফার্ম

বিশ্ব পরিমণ্ডলের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক জোরালো করতে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে বিএনপি। ‘আকিন গাম্প’ নামের একটি আন্তর্জাতিক লবিস্ট ফার্ম গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেছে। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থান মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে ধরছে বিএনপি। চুক্তি অনুসারে আকিন গাম্প বিএনপির হয়ে মার্কিন সরকারের কর্মকর্তা, থিঙ্কট্যাঙ্ক ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করবে। ফার্মটির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের (এফএআরএ) অধীনে মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গত জুলাই মাসে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আকিন গাম্প। তবে জুলাই মাস পর্যন্ত সংস্থাটিকে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে ফার্মটির এক প্রতিবেদনে। এ ফার্মটি এর আগে বাংলাদেশে ব্যবসা করা একটি টেলিকম ব্র্যান্ডের সঙ্গে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশ বন্ড বাজারে ছাড়ার ইস্যুতে কাজ করেছিল।  লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আকিন গাম্পকে বিএনপি লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে একটি আধুনিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এ ধরনের লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দিতেই পারে।  যেমন- অতীতে আওয়ামী লীগ ইন্ডিয়ায় লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টি লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে। দেশের অন্যান্য দলও অতীতেও দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিজেদের তুলে ধরার জন্য এটা কোনো দল করতেই পারে। এটা দোষের কিছু নয়।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের নানা অপকর্ম তুলে ধরতে কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেছে কিনা আমার জানা নেই। আমার মনে হয়, সরকারের নানা অনিয়ম তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমই যথেষ্ট। গণমাধ্যমের সুবাদেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির দুরবস্থা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উঠে আসছে। তাই লবিস্ট নিয়োগের কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছি না।

সূত্রমতে, গত ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক চুক্তির আগে জানুয়ারিতে বিএনপির হয়ে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আকিন গাম্প। এসব যোগাযোগে বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনার বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হয়। এই প্রাক-আলোচনার ভিত্তিতেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরে বিএনপির হয়ে আকিন গাম্প মার্কিন প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমপক্ষে ২৫টি বৈঠকসহ বিভিন্ন সময়ে ই-মেইলে যোগাযোগ করে। এসব বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপি যে কোনো মৌলবাদী দল নয় তা তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের সীমাহীন আক্রোশের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। যোগাযোগ ও বৈঠকের তালিকা অনুসারে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে চার দফায় যোগাযোগ ও বৈঠকের আয়োজন করে লবিস্ট ফার্ম। সেগুলো হলো- গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিএনপির বিবৃতি ই-মেইলে নিশা দেশাইকে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন ফরেন পলিসি নিয়ে নিশা দেশাইকে ৩ মার্চ ই-মেইল পাঠানো, ৪ মার্চ প্রথম বৈঠক ও ৯ মে দ্বিতীয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অতুল কেশাপের কাছে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরা হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি। স্টেট ডিপার্টমেন্টের বাংলাদেশ বিষয়ক পরিচালক ক্লিনটন ব্রাউনের সঙ্গে ১৫ জানুয়ারি বৈঠক, ফেব্রুয়ারিতে দুই দফায় ই-মেইল ও এপ্রিলে টেলিফোন যোগাযোগ করা হয়। সর্বশেষ ব্রাউনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ১২ মে। এ ছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের কান্ট্রি অফিসার ক্রিস্টোফার এলমস ও গিলবার্ট মর্টন, ডেপুটি ডিরেক্টর এরিক কলিন্স এবং মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের বিশেষ সহকারী ম্যাথিউ হাইকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আকিন গাম্প। এসবের বাইরে বিএনপির পক্ষ থেকে আকিন গাম্প মার্কিন কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির পলিসি অ্যাডভাইজার হান্টার স্ট্রাম্প, প্রফেশনাল স্টাফ মেম্বার জনাথন সারাঙ্গার, সাজিত গান্ধী, ক্যারেলিন লেড্ডি, ডেমিয়েন মারফির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ ছাড়া সিনেটর বেন কারডিন, জন ম্যাককেইন, লিন্ডসে গ্রাহাম, জিম রিসের কর্মকর্তারাসহ প্রায় ৬০ জন মার্কিন বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে আকিন গাম্প।

জানা যায়, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ লবিস্ট ফার্ম আকিন গাম্পের ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, লন্ডন, জেনেভা, দুবাই, মস্কো, হংকংসহ ২১টি বড় বড় শহরে কার্যালয় আছে। এ সংস্থার হয়ে কাজ করছেন ৯২৬ জন আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়িক নির্বাহীসহ নানা পেশার মানুষ। বিএনপির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুসারে আকিন গাম্পকে প্রথম তিন মাসে ৪০ হাজার পাউন্ড করে পরিশোধ করবে বিএনপি। পরে কাজের পরিমাণ বেড়ে গেলে মাসিক ৮০ হাজার ডলার থেকে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত পরিশোধে একমত হয়েছে উভয়পক্ষ। চুক্তিপত্রে হ্যাল শেপিরো নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ম্যাক ফাদলাল্লাহ ও জন চাকলাদারের যৌথ অ্যাকাউন্টে অর্থ পরিশোধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ অ্যাকাউন্ট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আরেক ব্যক্তি হচ্ছেন অনুরাগ ভার্মা। ভার্মা এর আগে বহু বছর ভারত সরকার ও ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের হয়ে কাজ করেছেন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর