মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

খাবার অনুপযোগী গম নিয়ে ৫ মাস উপকূলে

আহসানুল করিম, বাগেরহাট

খাবার অনুপযোগী গম নিয়ে ৫ মাস উপকূলে

ফ্রান্স থেকে আমদানি করা খাদ্য বিভাগের শত কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ৫২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন খাবার অনুপযোগী পোকায় ধরা নিম্নমানের গম খালাসের সুযোগের অপেক্ষায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থান করছে এমভি পিনটেল। জাহাজটি সাইপ্রাসের পতাকাবাহী। সারা দেশে ‘ব্রাজিলের পচা গম’ নিয়ে হৈচৈয়ের মধ্যেই ফ্রান্স থেকে আনা এই গম খালাসে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমদানিকারক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইমপেক্স কনসালটেন্ট লিমিটেড তা চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করতে পারেনি। পরে তারা জাহাজটিকে কৌশলে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে যায়।  জানা গেছে, ঢাকার এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটিকে এই গম খালাসের জন্য থাকতে হয় সময় ও সুযোগের অপেক্ষায়। তাদের হাতে সুযোগটি এসে যায় সেপ্টেম্বরের শেষ ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। ওই সময়ে ঢাকা-রংপুরে ইতালি ও জাপানের দুই নাগরিক সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হলে দেশ-বিদেশে শুরু হয় তোলপাড়। কর্মরত বিদেশিরা বাংলাদেশ ছাড়তে শুরু করেন। এই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত গম পরীক্ষায় কর্মরত একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিরাপত্তাহীনতায় এদেশ ছাড়েন। এই সুযোগে আমদানিকারক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খাদ্য বিভাগ ও চট্টগ্রামের আমদানিকৃত গম খালাস তদারকি কমিটিকে দ্রুত ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে পরীক্ষা রিপোর্ট এনে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন গম খালাস করে। এরপরই বাধে বিপত্তি। আমদানিকৃত চাল-গমের ৪০ ভাগ মংলা বন্দরে খালাস করতে হবে প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশ থাকায় এরপর এই নিম্নমানের অবশিষ্ট ২১ হাজার মেট্রিক টন গম খালাসের জাহাজটিকে ১২ অক্টোবর নিয়ে আসা হয় মংলায়। এই বন্দরে আমদানিকৃত গম খালাস তদারক কমিটি ১৩ অক্টোবর জাহাজে গিয়ে আমদানিকৃত গম পোকায় খাওয়া, পোকাধরাসহ খাবার অনুপযোগী ও নিম্নমানের দেখতে পায়। গমের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তদারকি কমিটি ৪৪ কোটি টাকা মূল্যের এই গম গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে বিপাকে পড়ে ইমপেক্স কনসালটেন্ট লিমিটেড। তারা খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রথমে মংলা বন্দর আমদানিকৃত গম খালাস তদারকি কমিটির সদস্যদের ম্যানেজের চেষ্টা চালায়। আমদানিকৃত গম খালাস তদারকি কমিটির সদস্যদের বলা হয় চট্টগ্রামে এই গমের পরীক্ষায় রিপোর্ট ভালো এসেছে-সাড়ে একত্রিশ হাজার মেট্রিক টন গম সেখানে খালাসও হয়েছে। বাকি এই গম গ্রহণ করতে তো আপত্তি থাকার কথা নয়। এই গম পুনরায় পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠাতে বলে তারা। এভাবেই মংলা বন্দর থেকে গম খালাসের চেষ্টা চালাতে থাকে তারা। এই গম নিয়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরোবার পর এখনো ওই গম খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে খালাসের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তদারকি কমটিরি আহ্বায়ক খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী নূরুল ইসলাম গতকাল জানান, গমবাহী জাহাজটি বর্তমানে মংলা বন্দরের অদূরে পশুর নদীর হাড়বাড়িয়ায় অবস্থান করছে। এই জাহাজের খাবার অনুপযোগী গম কোনো অবস্থাতেই গ্রহণ করা হবে না। এই গম মানব দেহের জন্য উপযোগী নয়। তবে এই গম পশু বা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। জাহাজে থাকা এই গমের মূল্য প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। মংলা বন্দর আমদানি গম খালাস তদারকি কমিটির অন্যতম সদস্য ও সিএসডি গোডাউন ম্যানেজার মো. আবদুল মান্নান তালুকদার জানান, গমের নমুনা ঢাকায় পাঠাতে বলা হয়েছে। জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট লিডমন্ড শিপিংয়ের পরিচালকরাও এই খাবার অনুপযোগী গম আমদানিকারকদের অংশীদার। তারাও এর সঙ্গে জড়িত।

লিডমন্ড শিপিংয়ের পরিচালক আক্তার হোসেন দাবি করেন, এতদিন আদালতের নির্দেশ থাকায় আমরা গম খালাস করতে পারিনি। ৬ মাস ধরে গম জাহাজে থাকায় গমে পোকা ধরা বিচিত্র কিছু না। তিনি স্বীকার করেন মংলায় খালাসের অপেক্ষায় থাকা গমের মধ্যে ২-৩ টন গমে পোকা ধরেছে। এ গমে ডাস্ট একটু বেশি, তবে খাবার উপযোগী। জাহাজটিতে ১৯ জন ক্রুর মধ্যে বেশির ভাগই জর্জিয়ার নাগরিক বলে জানান তিনি।

 

সর্বশেষ খবর