বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

খোকার ১৩ বছর জেল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত

আদালত প্রতিবেদক

খোকার ১৩ বছর জেল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত

সম্পত্তির তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ রায় দেন। খোকা অবৈধভাবে ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন রায়ে উল্লেখ করে ওই সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সাদেক হোসেন খোকা এখন চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে। তাকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে। রায়ের পরে খোকার আইনজীবী মহসিন মিয়া বলেছেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। তবে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দিয়েছেন। রায়ে আদালত বলেন, খোকা অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার টাকার সম্পদের ওপর প্রযোজ্য কর ফাঁকি দিয়েছেন। রায়ে দুদক আইনের ২৬-এর ২ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে খোকাকে ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে তাকে আরও এক মাস জেল খাটতে হবে। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় ২৭ এর ১ ধারা অনুযায়ী খোকাকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে তাকে আরও ছয় মাসের সাজা ভোগ করতে হবে। দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সাদেক হোসেন খোকা সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও মেয়রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এলেও অবৈধ সম্পদ রেখে অপরাধ করেছেন। আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা করেননি। তার প্রতি নমনীয় হওয়ার সুযোগ নেই।

রায়ে যে ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর যেসব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে খোকার মালিকানাধীন গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৭২ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের পাঁচ কাঠা জমি এবং তার উপর ছয়তলা ভবনও রয়েছে, যার দাম ২ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মেসার্স বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ২৭ খণ্ড কৃষি জমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ৩৪ খণ্ড কৃষি জমিসহ মোট ৬১টি দলিলে ১৩৩.৫৯৫২ একর জমি রয়েছে। এসব জমির ৪ মালিকের মধ্যে খোকার অংশ হিসেবে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দামের ১০০.১৯৪৬ একর জমি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে হাবিব ব্যাংকে জমা করা টাকা থেকে ২৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ টাকা নিয়ে মোট ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুদক রমনা থানায় এ মামলা করেন। খোকার পাশাপাশি তার স্ত্রী ইসমত আরা এবং ছেলে ইসরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেককেও মামলায় আসামি করা হয়। ওই বছর ১ জুলাই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা খোকার ছেলে ও মেয়ের নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আর অভিযোগপত্র হওয়ার আগেই ইসমত আরা হাইকোর্টে গিয়ে তার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ পান। পরে মামলা বাতিল চেয়ে সাদেক হোসেন খোকা হাইকোর্টে আবেদন করেন। দীর্ঘদিন নিম্নআদালতের বিচার কার্যক্রম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত ছিল। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে খোকার আবেদন বাতিল হওয়ায় বিচারিক আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় খোকার বিচার শুরু হয়। এর আগেই খোকা চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে চলে যান। গত ৪ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায়ের জন্য রাখা হয়।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া : এদিকে গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, উচ্চ আদালত সাদেক হোসেন খোকাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া এবং বিনা বাধায় দেশে ফেরার অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে খোকাকে পলাতক দেখিয়ে নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছেন তা আইন-বহিভর্‚ত। এ ছাড়া দুদকের করা মামলাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। এ মামলায় নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছেন তা আইনানুগ হয়নি। এ রায়ের মধ্য দিয়ে সরকার সাদেক হোসেন খোকাকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করেছে। রিপন বলেন, সাদেক হোসেন খোকা যাতে রাজনীতি করতে না পারেন এই হীন প্রচেষ্টায় এ রায় দেওয়া হয়েছে। একতরফাভাবে মামলা চালিয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাকে মামলা পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর