শিরোনাম
বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সরকার সব ধর্মের সহাবস্থানে বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার সব ধর্মের সহাবস্থানে বিশ্বাসী : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চায়। আমরা সব ধর্মের অধিকার সংবিধানে নিশ্চিত করেছি। কোনো ধর্মই মারামারি, হানাহানি সমর্থন করে না। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার-এ অধিকার বর্তমান সরকার নিশ্চিত করেছে। দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। এ কারণে সবাই নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারছে।’ গতকাল বিকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজামণ্ডপে শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রথমে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, পরে রামকৃষ্ণ মিশন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেয় শিশুরা। রামকৃষ্ণ মিশনে বরণ করেন পূজা কমিটির নেতারা। ঢাকেশ্বরীতে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা এ মাটিতে জন্ম নিয়েছেন। আপনারা এ মাটির সন্তান। আপনারা এ মাটিতে বসবাস করেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন। সে রকম আত্মবিশ্বাস নিয়েই বসবাস করবেন। বর্তমান সরকার সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে। মানবতার জয় হোক এটাই আমাদের কামনা।’

রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও পূজামণ্ডপে শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখানে আসতে পেরে খুশি। আমি প্রতিবছরই আসি। বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের সমানভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আপনাদের পূজা সুন্দর ও সফলভাবে পালন হোক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে যত হিন্দুধর্মের লোক আছেন, সবাই সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করবেন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে ব্যবস্থা নিয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে অনুরোধ করব, সবাই সহযোগিতা করুন। সার্বজনীন পূজা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারে সে জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পরপরই তিনি আমাদের একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। সেখানে সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ করেছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সব ধর্মের সমান অধিকার।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দেওয়া হয়েছিল। অথচ ধর্মনিরপেক্ষতা মানেই ধর্মহীনতা ছিল না। বরং সব মানুষকে ধর্ম পালনের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলার মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধন করে সব ধর্মের মানুষের সমান স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করেছি। আমাদের দেশের নৃজাতি-গোষ্ঠীর অধিকার সংবিধানে নিশ্চিত করেছি।’ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেলেন। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা দুটি বোন বিদেশে ছিলাম বলেই বেঁচে গেছি। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারকে হত্যা ছিল না। একটি চেতনা ও আদর্শকে হত্যা করা হয়েছিল। স্বাধীনতার চেতনার যে লক্ষ্য ছিল, সেটিকে হত্যা করা হয়েছিল।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এগুলোর হাত থেকে মানুষ মুক্তি পাক। শান্তিতে বসবাস করুক সেটিই আমি চাই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ উন্নত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। এটি জাতির পিতাই চেয়েছিলেন। আমাদেরও লক্ষ্য তাই। আজ বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। বাসস্থানের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষিত ও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ে তোলা, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই বাংলাদেশে সব মানুষ সুখে থাক, সুন্দরভাবে বসবাস করুক। মানবতার জয় হোক, এটিই আমাদের কামনা।’ ঢাকেশ্বরীতে ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি কাজল দেবনাথ, মহানগর উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত দেবনাথ। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ আজিজ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দী, অপু উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশনে বক্তব্য রাখেন মিশনের অধ্যক্ষ ধ্রুবেশানন্দ। মিশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট প্রদান করেন গুরু মহারাজ স্বামী অমেয়ানন্দ। এ ছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল ও পূজা উদ্যাপন কমিটির পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ সময় ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মুকুল চৌধুরী, ডা. দিলীপ কুমার, ওয়ার্ড কাউন্সিল আবু হানেফ মান্নাফী, ময়নুল হক মনজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর