বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ছাত্রদল নেতাদের অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী রুহুল হক

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

ছাত্রদল নেতাদের অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী রুহুল হক

আইলাবিধ্বস্ত আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনকূল এলাকায় ছাত্রদল নেতাদের আয়োজনে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনার মুখে পড়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় হওয়ার পর স্থানীয় খোলপেটুয়া এএইচটি যুবসংঘের সভাপতি শ্রীউলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি মাসুদ রানা ও তার পিতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে জামায়াত-শিবির শ্রীউলায় নাশকতা চালিয়েছিল। এবার তাদের নেতৃত্বে হাজরাখালী খেয়াঘাটসংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনকূল এলাকায় ১৪ অক্টোবর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভায় অংশ নিলে আশাশুনি উপজেলা ও জেলাব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েন সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক। এর আগে এ নৌকাবাইচ আয়োজনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাদের ব্যাপক চাঁদাবাজি ও আইলাবিধ্বস্ত নদীর ভাঙনকূল এলাকায় হওয়ায় মানুষের চাপে বেড়িবাঁধ আবারও নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে এ আশঙ্কায় এলাকাবাসী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য ৪ অক্টোবর গণস্বাক্ষরে পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। ওই দরখাস্তে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি বন্ধের জন্য জোর সুপারিশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ওই নদী ভাঙন এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের কাজ চলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশাশুনি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এরপর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি। এক পর্যায় ছাত্রদল ও বিএনপির ওই নেতারা দ্বারস্থ হন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও স্থানীয় এমপি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের। পরে ছাত্রদলের ব্যানার চেঞ্জ হয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের সামনে রেখে ডা. আ ফ ম রুহুল হককে প্রধান অতিথি করে নৌকাবাইচ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে সভাপতিত্ব করেন সেই ছাত্রদল সভাপতি মাসুদ রানা। বক্তব্য দেন ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতিসহ ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মী। ফলে ওই অনুষ্ঠান বর্জন করেন আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম মুস্তাকিম ও শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা শাকিলসহ সরকারদলীয় একাধিক নেতা-কর্মী। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের অভিযোগ, সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী নাশকতার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বদানকারী আসামি ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমরা এক মঞ্চে উঠতে পারি না। কিন্তু সরকারের একজন এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে ডা. রুহুল হক এক মঞ্চে বসে কখনো অনুষ্ঠান করতে পারেন না। ডা. রুহুল হক আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে সে কাজটি করে যাচ্ছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম মুস্তাকিম ও শ্রীউলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল আরও জানান, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা রুহুল হকের নির্বাচনী এলাকায় সখিপুরে রাস্তায় মাটি তুলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতীক কবর তৈরি করেছিলেন। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। সে সময় তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে সাতক্ষীরায় এসে সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াতের হাতে তার এলাকায় একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ সাতক্ষীরায় খুন হন পাঁচজন দলীয় নেতা-কর্মী। এক সপ্তাহ সেখানে অবস্থান করার পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ না করে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিপদে ফেলে পুনারায় হেলিকপ্টারযোগে সাতক্ষীরা ত্যাগ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর