শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
গোয়েন্দাদের দাবি

ভিডিওচিত্রের তিন জনই সিজারের খুনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারের খুনিরা চিহ্নিত হয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ খুনের মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ তথ্য দিয়ে বলেছে, খুনিরা তাদের নজরদারির মধ্যেই রয়েছেন। যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে। খুনের ঘটনায় সর্বশেষ প্রকাশ পাওয়া ভিডিও ফুটেজে যে তিন যুবককে দেখা গেছে, এ তিনজনই খুনের ঘটনায় জড়িত বলে গোয়েন্দারা এখন নিশ্চিত। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজই খুনিদের চিহ্নিত করতে সহায়তা করেছে। তাদের শনাক্ত করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের শেষ পর্যায়ে  রয়েছেন তদন্তকারীরা। খুনের ঘটনার বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ এখন তাদের হাতে। খুনিদের গ্রেফতার করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অন্য একটি সূত্র বলেছে, সন্দেহভাজন তিনজনই গোয়েন্দাদের হাতে আটক রয়েছেন। তবে গোয়েন্দা পুলিশ তা স্বীকার করেনি। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বুধবার বলেছেন, বিদেশি নাগরিক হত্যা রহস্যের জট শিগগিরই খুলবে। তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। শিগগিরই অপরাধীদের আটক করে বিচারের আওতায় এনে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে, দক্ষিণ বাড্ডার বাসা থেকে আটক রাসেল চৌধুরীর বাবা-মা ছেলের খোঁজে গতকাল গোয়েন্দা দফতরে যান। কিন্তু তাদের গেট থেকেই বিদায় করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন রাসেলের বাবা-মা। তারা ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জিহাদ হুসেইন বলেন, প্রাথমিক তদন্তের শেষ পর্যায়ে রয়েছেন তদন্তকারীরা। খুনের ঘটনার বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ এখন তাদের হাতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাভেলা খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত দেড় ডজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের বিষয়ে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। এ তিনজনের মধ্যে দুজনের নাম রাসেল। অন্যজন রুবেল। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, ঘটনার সময় খুনিদের একজন রাসেল বলে ডাকাডাকি করেছেন। সে সূত্র ধরেই গোয়েন্দারা রাসেলকে খোঁজ করতে থাকেন। এ ছাড়া গুলশান ৯০ নম্বর সড়ককে কেন্দ্র করে ২ কিলোমিটার এলাকায় যেসব মোবাইল ফোন সচল ছিল সেই নম্বরগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। ওই নম্বরের মধ্যে রাসেলের ফোন নম্বরটি ছিল। পুলিশ ভিডিও ফুটেজ এবং ফোন নম্বরের সূত্র ধরে দক্ষিণ বাড্ডা থেকে আটক করে রাসেল চৌধুরীকে। রাসেলের দেওয়া তথ্যে আটক হন তার বন্ধু রুবেল। রুবেলকে জেরার মুখে বেরিয়ে আসে আরেক রাসেলের নাম। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রাসেল ও রুবেল আগে থেকেই বন্ধু ছিলেন। সম্প্রতি রাসেল চৌধুরীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক হয়। একটি পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে তারা ঘোরাফেরা করতেন। ২৮ সেপ্টেম্বরের আগেও তারা একসঙ্গে ঘোরাফেরা করেছেন। তবে তাদের মধ্যে দুজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, আটকদের নিয়ে ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছেন গোয়েন্দারা। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে তাদের চেহারা মেলানো হয়েছে। এদিকে, খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও এক ব্যক্তিকে আটক করা হয় মঙ্গলবার রাতে। তার নাম এম মতিন। তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ডিসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম এ কাইয়ুমের ছোট ভাই। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো হদিস পায়নি পরিবার। মতিনের স্ত্রী দিলরুবা অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাতে বাসার কাছে একটি মসজিদ থেকে এশার নামাজ আদায় করে ফিরছিলেন তার স্বামী। বাড্ডা লিঙ্ক রোডে তার বাসার সামনে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি সেখানে পৌঁছানো মাত্র গাড়ি থেকে তিন ব্যক্তি নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। এ সময় তার স্বামীর সঙ্গে কথোপকথনের এক পর্যায়ে এলাকার পাঁচ-ছয় জন ব্যক্তি উপস্থিত হন। এলাকাবাসীর কাছে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা জানান, তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য। তারা পরিচয়পত্রও দেখান। মতিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি অফিসে নেওয়া হবে। পরে তারা ওই মাইক্রোবাসে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যান। তবে গোয়েন্দা পুলিশ এ আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

সর্বশেষ খবর