শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন

রাজনীতিতে ভালো লোক না এলে দেশের ক্ষতি

মাহমুদ আজহার

রাজনীতিতে ভালো লোক না এলে দেশের ক্ষতি

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন

রাজনীতিতে ভালো মানুষ না এলে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য ‘চরম’ ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘আজ দেশে ভালো রাজনীতিবিদের খুবই অভাব। সংসদেও ভালোমানের আইনপ্রণেতা অনুপস্থিত। এটা দেশ ও গণতন্ত্র দুটোর জন্যই চরম ক্ষতিকর। এ জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সাবেক এই সভাপতি। তার মতে, ‘অনেকেই আজ কোটি কোটি টাকার শুল্কমুক্ত গাড়ি-বাড়ির জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন। এমপি নির্বাচিত হয়েই তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এটি বন্ধ করতে হবে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। ভালো মানুষকে এমপি নির্বাচিত করে নিয়ে আসতে হবে। তাদের রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে সক্রিয় করতে হবে। এতে দেশেরই মঙ্গল হবে। আজকের দুরবস্থা শুধু ক্ষমতাসীনদের বেলায় নয়, অতীতের সব সরকারের মধ্যেই কমবেশি এ প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘দেশে আজ প্রয়োজন কেজরিওয়ালের মতো মন্ত্রী, যারা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। রাষ্ট্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। এখন যুক্তরাজ্য কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রীদেরও এত বাড়ি-গাড়ির বিলাসিতা নেই। আমাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিদের মতো এত শানশওকত পৃথিবীর কোথাও নেই। বিশ্ব রাজনীতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদেরও সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতিবাজ না হলে দেশের সব সেক্টরেই এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কালো টাকা, ঘুষ, দুর্নীতি নির্মূল হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘যখনই কোনো দল সরকার পরিচালনায় যায়, তখনই তাদের এক চোখ অন্ধ হয়ে যায়। তারা আরেক চোখে শুধু নিজেদের ভালোটাই দেখে, মন্দ দিকটা নয়। বিরোধী দল বা মতের ভালো কাজও তাদের কাছে খারাপ লাগে। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বর্তমান-অতীত কোনো সরকারই এর বাইরে নয়। আমাদের ইতিবাচক রাজনীতি করতে হবে। স্বচ্ছ ইমেজের রাজনীতিবিদদের গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে সবার জন্যই তা ক্ষতিকর।’

ক্ষমতাসীন দল নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে নির্বাচন না দিলে বিএনপি কী করবে- এমন প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘অতীতে স্বৈরাচার আইয়ুব, ইয়াহিয়া, এরশাদসহ কেউই ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে পারেননি। বর্তমান সরকারও পারবে না। মানুষ জেগে উঠলে সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল হবেই হবে। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারও ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার চিন্তাভাবনা করেছিল। কিন্তু তারাও টিকে থাকতে পারেনি।’ নিজ দলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যদি ভালো রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বে না আনতে পারেন, তাও দেশ ও দলের জন্য কল্যাণকর হবে না। কারণ দুর্নীতিবাজদের দিয়ে দেশে ভালো রাজনীতি আশা করা যায় না। তাদের হাতে রাজনীতি গেলে দেশের জন্যও ক্ষতি হবে। আমরা আশা করছি, বিএনপিপ্রধান দেশে ফিরে দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেবেন। স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসবেন। তৃণমূলেও অপেক্ষাকৃত ভালো রাজনীতিবিদরা আসবেন। ভালো রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আনতে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ সব দলকেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’ তার মতে, ‘রাজনীতি এখন পয়সাওয়ালা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। যাদের টাকাপয়সা নেই, রাজনীতিতে তারা পেছনের সারিতে। প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি না থাকলে তা দেশের জন্যই অমঙ্গল। আমরা এখন দুর্নীতিও করতে পারব না, আবার বোমাও মারতে পারব না। আমরা দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই। আইনের শাসন দেখতে চাই। স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে ফিরে যেতে দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা জরুরি।’ বিএনপি আন্দোলনে আছে জানিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মারদাঙ্গা না হলেও আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যেই আছি। সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত এ নিয়ে কথা হচ্ছে। সরকারকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত। সংঘাত-সহিংসতা আমরাও চাই না।’ দোষারোপের রাজনীতির কারণে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন জয়নুল আবেদীন। তার ভাষায়, ‘প্রকৃত খুনিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে না। তাদের আড়ালের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে বিরোধী দলকে দায়ী করার চেষ্টা চলছে। এটি ঠিক নয়। এতে বিচার কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’ দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত দাবি করে তিনি বলেন, ‘সবকিছুর মধ্যেই আজ ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় যুবলীগ, ছাত্রলীগ আজ টেন্ডার-বাণিজ্য করছে। মারামারি-খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে। সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

 

সর্বশেষ খবর