শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নতুন আতঙ্কে বিদেশিরা

জুলকার নাইন

নতুন আতঙ্কে বিদেশিরা

এবার অক্টোবরের শেষ নাগাদ বিদেশিদের ওপর হামলা হতে পারে বলে দাবি করছে পশ্চিমা দেশগুলো। দুর্গাপূজা ও আশুরা-সংশ্লিষ্ট আয়োজন এবং এর পরের সপ্তাহজুড়ে লোকসমাগমের স্থানে এ ধরনের হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দাতথ্যের কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। পশ্চিমা এই দেশগুলোর বাইরে দক্ষিণ কোরিয়াও হঠাৎ এ ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে তাদের সতর্কবার্তা হালনাগাদ করেছে। গোয়েন্দাতথ্য থাকার কথা বলা হলেও ঢাকার দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো থেকে সরকারকে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য গতকাল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। দূতাবাস থেকে নিজ নিজ সদর দফতরের অনুমোদন পাওয়ার পর তথ্য দেওয়ার কথা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। নতুন করে এমন শঙ্কার প্রেক্ষাপটেই বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পশ্চিমা চার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশন বিদেশিদের জন্য সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দীর্ঘ মেয়াদে বহাল রাখার অনুরোধ করেছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্যানুসারে অক্টোবরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থসংশ্লিষ্টদের সমাগমের স্থানে হামলা হতে পারে। জঙ্গি-সংশ্লিষ্টরাই এ হামলা চালাতে পারে। নতুন করে আরও সতর্কতা জারি করা হবে কি না, জানতে চাইলে ব্রিটিশ হাইকমিশন সূত্র জানায়, অক্টোবরের শেষ নাগাদ হামলার শঙ্কা থেকেই ৯ অক্টোবর ভ্রমণ-সতর্কতা হালনাগাদ করা হয়।

এতে নির্বিচারে হামলার শঙ্কা প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ ও কমনওয়েলথ পররাষ্ট্র দফতর। এর আগে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এ ধরনের হামলা করা হতে পারে বলে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা দাবি করেছিলেন। ওই সময় ঘটনাক্রমে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার ও জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এই দুই হত্যায় জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা নেই বলা হলেও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে অক্টোবরেও জঙ্গি হামলার শঙ্কাই প্রকাশ করা হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, অক্টোবরের নতুন এ হামলার শঙ্কার পর আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির প্রধান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকের ক্ষণ নির্ধারণ করেন নিরাপত্তা ইস্যুতে একসঙ্গে পথচলা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার চার কূটনীতিক। মূলত বিদেশি নাগরিকদের জন্য সরকারের নেওয়া জোরদার নিরাপত্তা বহাল রাখার অনুরোধ জানানোই ছিল রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের মূল আগ্রহের বিষয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক উলে­খ করলে চার রাষ্ট্রদূত তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার জানতে চেয়েছেন, নিরাপত্তা নিয়ে তাদের শঙ্কার কারণ কী। কিন্তু চার কূটনীতিকের কেউই কোনো কারণ বলেননি। শুধু মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, হামলার হুমকি বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোথায় কী হুমকি রয়েছে তা পূর্ণাঙ্গভাবে জানাতে অনুরোধ করে বলেন, এ-সম্পর্কিত তথ্য পেলে তার ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। জবাবে রাষ্ট্রদূতরা বলেন, সদর দফতরের সিদ্ধান্তের বাইরে তাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে গোয়েন্দাতথ্যের ভিত্তিতে তাদের সংস্থাগুলো কাজ করছে। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথভাবে কাজ করলে সমস্যা সহজেই দূর করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন। সেই সঙ্গে বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে জোরদার নিরাপত্তা যত দিন প্রয়োজন রাখা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয় পশ্চিমা এই কূটনীতিকদের।

এ চার দেশের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের ফেসবুক পাতায় এক সতর্কবার্তায় অক্টোবরের শেষ নাগাদ হামলার শঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, দুর্গাপূজা ও আশুরার সময় লোক সমাগমের স্থান থেকে বাংলাদেশে থাকা কোরিয়ার নাগরিকদের সতর্ক থাকার জন্য বলা হচ্ছে। অপরাধ প্রবণতা পরিস্থিতির কারণে সবাইকে বাড়তি সতর্কতা রাখার কথাও বলেছে দূতাবাস। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ভ্রমণ সতর্কতা জারি রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, জাপান, হংকংসহ আরও কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে ৯ অক্টোবর সতর্কতা হালনাগাদ করেছে যুক্তরাজ্য এবং ১৭ অক্টোবর হালনাগাদ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আইএসের দায় স্বীকার সরিয়ে নেওয়া হয়নি : যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কবার্তায় উলে­খ করা হয়েছে, বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। কিন্তু এর কোনো তথ্যভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ দুই দেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয় আইএসের দায় স্বীকারের কথা সরিয়ে নিতে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত এ তথ্য সরানো বা সংশোধন করা হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর