বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঢাকায় গুলি করে কিশোর খুন, তারপর ফিল্মি গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় গুলি করে কিশোর খুন, তারপর ফিল্মি গল্প

রিয়াদুল ইসলাম

পুরান ঢাকার ওয়ারীতে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ (১৬) নামে এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একটি মোবাইল ফোন সেট চুরি হওয়াকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ ও নিহতের সহকর্মীরা জানিয়েছে। জানা গেছে, রিয়াদ মতিঝিল ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মচারী। ওই হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল তাকে বেধড়ক মারধরের পর গুলি করে হত্যা করেন। এরপরই রিয়াদকে নিয়ে ফিল্মি গল্প তৈরি করে ফেলেন সোহেল। রিয়াদ ছিনতাইকারীর গুলিতে মারা গেছে বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার ফিল্মি গল্প হোটেলের কর্মচারীরা ফাঁস করে দেন। এ ঘটনায় হোটেল ম্যানেজার শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে সোহেল পলাতক রয়েছেন। জানা গেছে, নিহতের বাবার নাম মৃত মফিজ উদ্দিন। দুই ভাইয়ের মধ্যে রিয়াদ ছোট। তার বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়াইন গ্রামে। নিহতের ভাই রিপন জানান, রিয়াদ মতিঝিল ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে সাড়ে তিন বছর ধরে কাজ করছে। সে ওয়ারীর স্বামীবাগ এলাকার মিতালী স্কুল গলির ৭৩ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকত। ওই বাসাটিতে ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারীরা থাকেন। মঙ্গলবার এক কর্মচারীর ১৫০০ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন সেট চুরি হয়। রিয়াদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে ঘরোয়া হোটেলের পেছনে হাত-পা বেঁধে মালিক সোহেল মারধর করেন। বিষয়টি মীমাংসার জন্য রিপন ঘরোয়া হোটেলে যান। কিন্তু এর আগেই বিকালে সোহেল তার ব্যক্তিগত গাড়িতে রিয়াদকে তুলে নিয়ে স্বামীবাগের ওই বাসায় যান। সেখানে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। স্বামীবাগের ওই বাসায় রিপন গেলেও তাকে ভিতরে ঢুকতে দেননি সোহেল। একপর্যায়ে সোহেল গলায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করলে রিয়াদ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে সোহেল এবং জসিম ও রাজ নামে দুই কর্মচারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একপর্যায়ে রিয়াদ ছিনতাইকারীর গুলিতে নিহত হয়েছে- এমনটি বলে মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন হোটেল মালিক সোহেল। সোহেল নিহতের সহকর্মীদের দিয়ে সেভাবে কাজও করান। প্রথম দিকে নিহতের সহকর্মীরা বলেন, মঙ্গলবার রাতে কাজ শেষে হোটেলের ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে মালিক সোহেলের শান্তিনগরের পীর সাহেবের গলির বাসায় তারা যাচ্ছিলেন। এ সময় শাপলা চত্বরে তাদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে থামার সিগন্যাল দেয় কয়েক দুর্বৃত্ত। অটোরিকশাটি না থামলে দুর্বৃত্তরা সিএনজিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে একটি গুলি রিয়াদের শরীরে লাগলে সে মারা যায়। কিন্তু প্রথম দিকে সহকর্মীরা মিথ্যা কথা বললেও পরে তারাই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য ফাঁস করে দেন। ওয়ারী থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা জানান, হোটেল মালিক ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ছিনতাইকারীর গুলিতে রিয়াদ নিহত হয়েছে এমন নাটক সাজাতে অন্য কর্মীদের শিখিয়ে দেন। তার শেখানো কথাই পরে হোটেলকর্মীরা গণমাধ্যমকে জানান। কিন্তু পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, এটা ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ওয়ারী থানায় মামলা করেছে। এ ঘটনায় হোটেল ম্যানেজার শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। হোটেল মালিক সোহেলকে ধরতে অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর