শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভোটের রাজনীতি জোটের রাজনীতি

কোনো কিছু এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি ১৪ দল

রফিকুল ইসলাম রনি

ভোটের রাজনীতি জোটের রাজনীতি

আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জোটগত না দলগতভাবে লড়বে, তা চূড়ান্ত করতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে, তাই কৌশলী হয়ে এগোতে চায় জোটের শরিকরা। এখন এককভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে জোটের ফোরামে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।

গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক হলেও কোনো সমাধানে আসতে পারেনি জোটের নেতারা। বৈঠকে শরিক দলের নেতারা আওয়ামী লীগের কাছে জানতে চান, কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে? উপযুক্ত সময় কিনা? এসবের সুদত্তর দিতে পারেনি জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেছেন, পরে এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করতে চাইলে আপত্তি থাকবে না শরিকদের। কারণ এই প্রথম তৃণমূলে দলের প্রতীক পরিচিতির একটি সুযোগ এসেছে তাদের সামনে। এ সুযোগটি হাতছাড়া করতে চায় না তারা। শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, তাদের দলগুলোর আধিক্য শহরকেন্দ্রিক। গ্রামকেন্দ্রিক সংগঠনের কমিটি থাকলেও পরিচিতি খুব বেশি নয়। আবার তাদের প্রতীকও অনেকেই চেনেন না। এবার সুযোগ এসেছে গ্রাম পর্যায়ে দলীয় প্রতীক পরিচিতির। এ ছাড়াও একক প্রার্থী করার ফলে জোটের প্রধান আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন না পেলে অনেক যোগ্য প্রার্থী কৌশলী ভূমিকায় বিদ্রোহী হতে পারেন। সরাসরি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নির্বাচনী এলাকার একটি নির্দিষ্ট ভোটের প্রয়োজন থাকায় কৌশলে জোটের শরিকদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায়ে তাদের দলীয় প্রতীক পরিচিতিটাও পাবে, আবার কেউ কেউ পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিতও হতে পারেন। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো যদি আওয়ামী লীগ সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করে তাহলেও আপত্তি থাকবে না শরিকদের। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলো হলো ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ (একাংশ), তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল­াহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে দলের ফোরামে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা দলীয় বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে এখনো জোটের মধ্যে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা হয়নি। তাই জোটগতভাবে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা এককভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্ন্বিতা করার প্রস্তুতি রাখছি। সে মোতাবেকই আমাদের কাজ এগিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এখন আলোচনা চলছে মনোনয়ন প্রক্রিয়াটি কীভাবে হবে? দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স্থানীয় সরকার নিয়ে এখনো জোটের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। স্থানীয় পরিস্থিতিই নির্ধারণ করে দেবে কোন দলের কে মনোনয়ন পাবেন। তবে আমি মনে করি, শরিক দলগুলোর কোথাও জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী থাকলে তাকে ছাড় দেওয়া উচিত। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে জাসদ অংশ নেবে। জোটগত না আলাদা, তা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এককভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া বলেন, জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও জোটগতভাবে করা উচিত। এতে ঐক্যও ঠিক থাকবে, সব দলকে মূল্যায়নও করা হবে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের প্রত্যাশা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও জোটগতভাবে করা। তবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।


সর্বশেষ খবর