শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এলাকাভেদে জোটকেও ছাড় দেবে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

এলাকাভেদে জোটকেও ছাড় দেবে বিএনপি

আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও দলীয় প্রতীকে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বসে নেই জোটের শরিক দল জামায়াতসহ অন্য দলের সমর্থকরাও। কেন্দ্রীয়ভাবে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও ২০ দলের নেতা-কর্মীদের পৃথকভাবে প্রস্তুতি চলছে। জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি ঘোষণা দিয়েই মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলীয় নিবন্ধনের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় ‘ধানের শীষ’ কিংবা ‘স্বতন্ত্র প্রতীকে’ নির্বাচনে যেতে পারে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠানকে ‘অসৎ পরিকল্পনা’ মনে করলেও বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না বিএনপি জোট। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার অপেক্ষা করছে ২০-দলীয় জোট। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তাকিয়ে আছেন তার দিকে। এ নির্বাচনের প্রতি খালেদা জিয়ার মনোভাব ইতিবাচক বলে জানা গেছে। লন্ডন যাওয়ার আগে দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতার পরিবর্তন হয় না। তাই এ নির্বাচনে বিএনপি জোটের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের যে কেউ অংশ নিতেই পারেন।’

তবে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির অন্যতম জোটসঙ্গী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। সোমবার দলটির সভাপতি অলি আহমদ দলের কাউন্সিলে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন জোটগতভাবে করা সম্ভব নয়। তাই নিজ নিজ এলাকায় আমাদের প্রার্থী ঠিক করতে হবে। এলডিপি আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেবে।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে নির্বাচনে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বর্তমান আজ্ঞাবহ ও পঙ্গু নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে বিশ্বাসী।’ জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি জোটে আছে। বিএনপি নির্বাচনে গেলে যেখানে জোটের প্রার্থী ভালো অবস্থানে তা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। অতীতে স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচনগুলোতেও জোটের বিষয়টি বিএনপি মাথায় রেখেছিল।’ জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের কথা হয়েছে। যেসব এলাকায় বিএনপি বেশি জনপ্রিয় ওইসব এলাকায় বিএনপির প্রার্থীকেই জোট সমর্থন দেবে। আবার যেসব এলাকায় জোটের শরিক দলের প্রার্থীরা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে, ওইসব এলাকায় বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনে জোট প্রার্থীরা অংশ নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির প্রতীকে জামায়াত বা অন্য কোনো দল নির্বাচনে যেতে না চাইলে বিকল্প হিসেবে স্বতন্ত্র প্রতীকও ব্যবহারের সুযোগ রাখা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগিরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে জোটের নেতারা এ নিয়ে বৈঠকে বসবেন। জানা যায়, স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আসন্ন পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে বিএনপি জোট মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলে বিএনপির একাধিক প্রার্থী। তবে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই দল বা জোটের অবস্থান স্পষ্ট করা হবে।

সূত্রমতে, স্থানীয় সরকারের পৌর ও ইউপি নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে দেশে ফিরেই দলের স্থায়ী কমিটি ও জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচনে গেলে প্রতিটি দলের গঠনতন্ত্রে কিছুটা সংশোধনী আসতে পারে। এর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত হবে, বিএনপি জোট কোন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থী বাছাইয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সমন্বয় কমিটির পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের নেতাদের সম্পৃক্ত করা হবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তৃণমূলে আওয়ামী লীগের জনসম্পৃক্ততা নেই বলেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় সরকারের মূল স্পিরিট থেকে সরে আসছে সরকার। সরকারের এ অসৎ উদ্দেশ্য কখনই সফল হবে না।’ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে জোটগতভাবে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে নানাভাবে কথাবার্তা হচ্ছে। এটা জোটগতভাবে না-ও হতে পারে।’

সর্বশেষ খবর