শিরোনাম
শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাইরেন বাজানো এই ভিআইপি কারা

জিন্নাতুন নূর

সাইরেন বাজানো এই ভিআইপি কারা

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে যানজটের মধ্যেও দামি গাড়িতে চড়ে সাইরেন বাজানো স্বঘোষিত ভিআইপিদের তৎপরতা বেড়েছে। তারা রাষ্ট্রীয় কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও  প্রভাবশালীদের আত্নীয় অথবা ক্ষমতাসীন দলে নিজের ছোটখাটো দলীয় পদের পরিচয় ভাঙিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে উচ্চৈঃ স্বরে সাইরেনযুক্ত গাড়ি হাঁকিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ চ্যালেঞ্জ করলেও তারা নাম ভাঙাচ্ছেন বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির। কেউ কেউ আবার অবৈধভাবে নিজ গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ব্যবহার করছেন। লাগাচ্ছেন সংসদ সদস্যের স্টিকার। এ ছাড়া নগরীর উঠতি বয়সী ধনীর দুলালেরা রাত নামতেই সাইলেন্সার ছাড়া পাইপ ও ডিজিটাল হর্ন বাজিয়ে বিকট শব্দ করে গাড়ি হাঁকিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, মোটরযান আইনে শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় এখন অনেকেই গাড়িতে সাইরেনযুক্ত হর্ন ও বিকট শব্দ তৈরি করে গাড়ি চালাচ্ছেন। আইনবিদ ও বিশিষ্টজনরা বলেছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড থামাতে সরকারিভাবে নির্দেশনা আসতে হবে যেন কেউ গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও সাইরেনযুক্ত হর্নের অপব্যবহার করার সুযোগ না পান।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা শহরে শুধু পূর্ণ মন্ত্রীরা ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে পারবেন। আর প্রতিমন্ত্রীরা ঢাকার বাইরে তা ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ছাড়া কারোরই সাইরেনযুক্ত হর্ন ব্যবহার করার কথা নয়। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে যে প্রটেকশন গাড়ি থাকে শুধু সেই গাড়িতে এই হর্ন ব্যবহার করতে পারবে।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বঘোষিত এই ভিআইপিরা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজেদের গাড়ির হর্নের সঙ্গে এই সাইরেন যুক্ত করে দিচ্ছেন। মন্ত্রীদের গাড়িতে যে ধরনের হর্ন থাকে এই ভিআইপি নামধারীরাও তেমন সাইরেনযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করছেন। শুধু সাইরেন নয়, এদের কারও কারও গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডও আছে। ঢাকার ট্রাফিক পুলিশ এই নবাগত ভিআইপিদের নিয়ে বিব্রত। কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষ কারও বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। সরকারের এই মেয়াদে এ ধরনের ব্যক্তিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা শুধু সড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন না, সরকারি অফিস-আদালতেও এ ধরনের গাড়ি সহকারে চলাফেরা করছেন। অথচ বিভিন্ন তদন্তে দেখা গেছে, এ ধরনের গাড়ির মালিকদের কেউ কেউ কেরানির চাকরিও করেন। কিন্তু চলেন দাপটের সঙ্গে। তারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে তথা ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে করেন। বিস্ময়কর হলেও পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এদের তোয়াজ করেন। আর এই গাড়ির মালিকদের কারও বাড়ি গোপালগঞ্জ হলে তো কথাই নেই। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির ছেলেকে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড বহনকারী গাড়িসহ চলাচল করতে দেখা যায়। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার এক এমপিকে সম্প্রতি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড বহনকারী গাড়িতে চলতে দেখা যায়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাকেও রাজধানীতে সাইরেনযুক্ত হর্ন বাজিয়ে আতঙ্ক তৈরি করতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই কর্মকর্তার এই ঘটনা দেখে দেশের ঊর্ধ্বতন এক প্রভাবশালী ব্যক্তি বিস্মিত হন। অনেক সময় সরকারের অনেক সচিব ও ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি এই সাইরেনযুক্ত গাড়ি দেখে সেই গাড়িটিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাইড দিয়ে দেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, যাকে সাইড দেওয়া হয়েছে তিনি আসলে স্বঘোষিত ভিআইপি সেজেছেন!

এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকা শহরে আরেকটি গ্রুপকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই গ্রুপটি ব্যক্তিগত গাড়িতে সাইলেন্সার পাইপ ছাড়া বিকট শব্দ তৈরি করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে বিত্তশালী পরিবারের উঠতি বয়সের তরুণরা এ ধরনের গাড়িগুলো চালিয়ে বা রেস করে বিকৃত আনন্দ খুঁজে পায়। এখন ঢাকার বাইরেও এ ধরনের গাড়ি চালানোর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আতঙ্ক ছড়াতে এদের কেউ কেউ আবার জীবজন্তুর অদ্ভুত আওয়াজের ডিজিটাল হর্ন ব্যবহার করে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার ওমর ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্দিষ্ট ব্যবহারকারী ছাড়া অন্যদের সাইরেনযুক্ত হর্ন ব্যবহার করা আইনসিদ্ধ নয়। যারা অবৈধভাবে এসব সাইরেন ও পতাকা ব্যবহার করছে আমাদের সামনে পড়া মাত্রই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা সাধারণত এসব ক্ষেত্রে মোটরযান আইনে মামলা দিই। কিন্তু মোটরযান আইনে শাস্তির পরিমাণ কম। মাত্র ৫০০ বা ১ হাজার টাকা জরিমানা হয়। অনেকেই এই জরিমানায় অর্থের পরিমাণকে গায়ে লাগান না। এ জন্য আমরা মোটরযান আইনে সাজার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করেছি। জরিমানা বাড়িয়ে তা ৫০ থেকে ৬০ হাজার করা হলে তা উপযুক্ত হবে বলে তিনি মনে করেন।

এ ছাড়া ঢাকায় উচ্চ শব্দে গাড়ি চালানো প্রসঙ্গে এই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, রাত সাড়ে ১০টার পর ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্বে থাকে না। এরপর কেউ উচ্চ শব্দে গাড়ি চালালে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে তা বের করা সম্ভব নয়। আর যদি কেউ ধরা পড়ে তবে টহল পুলিশের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা পতাকাবাহী গাড়ি ব্যবহার করছেন। কিন্তু পুলিশের উচিত আইন ভঙ্গ করে কেউ এ ধরনের গাড়িতে পতাকা ও সাইরেনযুক্ত হর্ন বাজালে তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করা। এমনকি এ ধরনের কর্মকাণ্ড থামাতে সরকারিভাবে নির্দেশনা আসতে হবে যেন কেউ গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও সাইরেনযুক্ত হর্নের অপব্যবহার করতে না পারেন।

 

সর্বশেষ খবর