শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
তাজিয়া মিছিল প্রস্তুতিতে হামলা

পুলিশ এখনো ধোঁয়াশায়

সাখাওয়াত কাওসার

পুলিশ এখনো ধোঁয়াশায়

তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলায় আহত এক শিশু। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি - বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত হলেও সাত দিনেও গ্রেফতার হননি রাজধানীর হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলে হামলাকারী দুই যুবক। হামলার দিন ওই এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যবহৃত লক্ষাধিক মুঠোফোন নম্বর পর্যালোচনা করেও এর কোনো ক‚লকিনারা করতে পারছেন না গোয়েন্দারা। হামলার নেপথ্য মদদদাতা কারা এবং কড়া নিরাপত্তার ফাঁক গলেও কীভাবে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটল তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় পুলিশ। অন্যদিকে, হোসনি দালানের নিরাপত্তা বাড়াতে কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ডিএমপি। তবে এখনো আতঙ্ক কাটছে না শিয়া সম্প্রদায়ের। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাদের অনেকেই। জানা গেছে, বুধবার হোসনি দালানের সুপারিনটেনডেন্ট এম ফিরোজ হোসাইন বরাবর হোসনি দালানের নিরাপত্তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ডিএমপি। লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজ আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে নিরাপত্তা বাড়াতে ছয়টি সুপারিশ করা হয়েছে। চিঠিতে সীমানাপ্রাচীর উঁচু করার কথা উলে­খ করা হয়েছে। পরে এতে কাঁটাতারের বেড়া লাগানোর কথা বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার স্বার্থে হোসনি দালানসহ এর সংলগ্ন এলাকায় লাইটিং বাড়ানো এবং সিসিটিভি সিস্টেম আপগ্রেড করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অযাচিত কোনো ব্যক্তি যাতে বিস্ফোরক কিংবা ক্ষতিকর বস্তু নিয়ে ওই স্থাপনায় ঢুকতে না পারে সে জন্য প্রবেশপথে একাধিক আর্চওয়ে স্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে হোসনি দালানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সেখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। তবে হোসনি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর জুলফিকার আলী বলেন, ‘কোনোভাবেই ঘটনাটি ভুলতে পারছি না। শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য এটি অনেক বড় ধাক্কা। এমনটি হবে কখনো কল্পনাও করিনি।’ ডিএমপির নিরাপত্তা সুপারিশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিঠি মাত্র এসেছে। এ বিষয়ে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এদিকে, ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে হোসনি দালানে গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনার দিন নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং এ ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ হোসনি দালানের পশ্চিম দিকে যে কবরস্থান থেকে দুর্বৃত্তরা গ্রেনেড ছুড়েছে তা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল না। এমনকি কবরস্থানে কোনো আলোর ব্যবস্থাও ছিল না। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বোমাটি গ্রেনেডের মতো ছুড়ে মারা হয়েছে। একজন ছুড়ে মারে এবং তার পাশে আরেকজনকে দেখা যায়। বেশ কিছু ব্যাপার পর্যালোচনা করে তদন্ত করা হচ্ছে। দুই যুবককে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। র?্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রথম গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হওয়ার পর জনসমাগম দেখে দ্বিতীয় গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়। এরপর পালানোর সময় আরেকটি গ্রেনেড ছুড়ে মারে সাদা কুর্তা ও জিন্স পরিহিত ওই দুর্বৃত্ত। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যজন তাকে এগিয়ে দিয়ে ছুড়ে মারতে সাহায্য করছিল। ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেফতার করে অতি শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। ঘটনাটি কীভাবে, কেন ঘটল, ঘটনাস্থলে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, ২৩ অক্টোবর শুক্রবার মধ্যরাতে পুরান ঢাকার লালবাগে হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় তিনটি হাতে তৈরি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এতে শতাধিক লোক আহত হন। নিহত হন কেরানীগঞ্জের নাসির উদ্দীনের ছেলে সাজ্জাদুল হক সানজু (১৬) নামের এক কিশোর। এদিকে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের রিয়াজউদ্দীন রোডের জামাল উদ্দিন (৫০) বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর