শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
নয়া দিল্লির চিঠি

আমিষ বলতে তারা শুধু গো-মাংসই বোঝেন

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি­তে অবস্থানকারী আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় সব শীর্ষ নেতাকে দেখা গেল পেটে খিদে আর মুখে লাজ! মোদি সরকারের আমন্ত্রণে তৃতীয় ভারত-আফ্রিকা সম্মেলনে যোগ দিতে আসা আফ্রিকার ৫৪টি দেশের সফররত মন্ত্রী, বাণিজ্য কর্তা, সাংবাদিকরাও ভুগেছেন এই রসনা এবং উদর অতৃপ্তিতে! ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এ সম্মেলন।

মাছ, মুরগি, মাটন থাকলেও নয়াদিলি­র মধ্যাহ্ন এবং নৈশভোজের কোথায় সেই কাক্সিক্ষত বিফ স্টেক, রোস্ট আর কারি? বরঞ্চ প্রতিদিন স্থানীয় সংবাদপত্র খুলে প্রথম পাতা পড়ে রীতিমতো ছেঁকা খেয়েছেন তিউনিশিয়া, সোমালিয়া, মরক্কো, লিবিয়াসহ উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর নেতা-মন্ত্রীরা। সেসব দেশের কোথাও ৬০ শতাংশ, কোথাও বা ৮০ শতাংশ মানুষই গোমাংসভোজী। তাদের প্রিয় খাদ্য নিয়ে রাজনীতি এবং হিংসা, যেন কিছুটা স্বাদেও অরুচি এনে দিয়েছে প্রতিনিধিদের। ঘরোয়াভাবে সে কথা জানিয়েছেন তারা। ৭০০ সাংবাদিক এবং দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধি নয়াদিলি­ এসেছিলেন আফ্রিকা থেকে। মরক্কোর একদল সাংবাদিক নিয়ে দিলি­র একটি নামজাদা রেস্তোরাঁতে খেতে গিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্তা। সূত্রের খবর, তারা খেতে বসে ‘আমিষ’ খাবার চান। কিছুটা বিস্মিত হন ভারতীয় কর্তারা, কারণ টেবিলে তখন ম ম করছে চিকেন কারি, মাটন কোর্মার গন্ধ। কিন্তু গোমাংসকেই যে ‘আমিষ’ বলে মনে করেন আলজেরিয়া, গিনি অথবা লিবিয়ার সাংবাদিকরা। আর অন্য কিছুকে নয়। সাধারণভাবে বঙ্গসন্তানের কাছে যেমন মাছ-ভাত, তেমনই বিফ স্টু তাদের কাছে প্রিয়তম খাদ্যধর্ম। সাধারণভাবে কূটনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো খাদ্য। আম থেকে শুরু করে ইলিশ পর্যন্ত ভারতীয় কূটনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গেছে। নেহরুর আমল থেকে আজ পর্যন্ত বিদেশ থেকে কূটনৈতিক অতিথিরা এলে সব সময়ই চেষ্টা করা হয়েছে তাদের দেশের প্রিয় ও জনপ্রিয় কোনো একটি পদ রাখতে। একইভাবে ভারতীয় রাষ্ট্রনেতারা বিদেশে গেলেও সেখানের আপ্যায়নের তালিকায় থাকে পনির বা নবরত্ন পোলাও। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর যখন যে দেশেই গেছেন, তা সে মরিশাসই হোক বা বাংলাদেশ তার জন্য হাজির থেকেছে তার পছন্দসই গুজরাটি নিরামিষ পদ। এটা ঘটনা যে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের নৈশভোজের তালিকায় এর আগেও গোমাংস সাধারণভাবে বাদই থেকেছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। কিন্তু এবারের সঙ্গে অন্যবারের তফাৎ রয়েছে। সেটি হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের নৈশভোজগুলো ব্যতীত, সফররত সাংবাদিক অথবা অন্য প্রতিনিধি, আমলাদের যে খাওয়া-দাওয়ার সরকারি ব্যবস্থা করা হতো সেখানে তাদের দেশের পছন্দসই খাবারে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকত না। কিন্তু এবার সমস্ত খাদ্য তালিকা থেকেই সরকারিভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে গোমাংস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর