রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
আলামত সেই একই

চাপাতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

একই কায়দায় চলছে একের পর এক খুন, খুনি অধরা। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে হামলা হচ্ছে পেছন থেকে, ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপানো হচ্ছে মাথা ও ঘাড়ে। টার্গেট ব্যক্তির ঘাড় ও গলা কাটাই যেন মূল লক্ষ্য। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন জঙ্গিরা একে বলছে কতল পদ্ধতি’। তারা বলছে, নাস্তিক’ ও মুরতাদদের’ এভাবেই শাস্তি দিতে হয়। কথিত এ পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত খুনের শিকার হয়েছেন ছয় মুক্তমনা ব্লগারসহ ২০ জন। আক্রান্তদের বাকিরা লেখক, ইসলামী বক্তা এবং কয়েকজন পীর-মুরিদ। জানা গেছে, হত্যার সময় খুনিরা ধারালো চাপাতি ব্যবহার করে। এবারই প্রথম ধারালো অস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, ব্লগার আশরাফুল আলম, অভিজিৎ রায়সহ ভিন্ন সময়ে ভিন্ন স্থানে একই ধরনের ২০ জনকে হত্যা করা হলেও তাদের সবার ওপর হামলা হয় একই কায়দায়। মূলত গলা থেকে দেহের ঊর্ধ্বভাগ অর্থাৎ মাথাই ছিল আক্রমণকারীদের লক্ষ্যবস্তু। হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল ধারালো অস্ত্র। ঘটনাগুলোর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একইভাবে হামলা চালিয়ে রাজীব, অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, উত্তরার রাশিদুল ও বুয়েটের ছাত্র দ্বীপকে হত্যা করা হয়। ড. হুমায়ুন আজাদ, আসিফ মহিউদ্দিনসহ আরও কয়েকজনের ওপরও একইভাবে হামলা করা হয়। কোপানো শেষে হামলাকারীরা হেঁটেই এলাকা ছাড়ে। তারা কোনো গাড়ি ব্যবহার করেনি। গোপীবাগে ছয়জনকে, রাজাবাজারে মাওলানা ফারুকীকে, খুলনার খালিশপুরে বাবা-ছেলেকে, আশুলিয়ায় ব্লগার আশরাফুল ও রাজধানীতে ব্লগার নিয়াজ মোর্শেদ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল আলমকেও একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গতকাল লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্রের সঙ্গে পিস্তলও ব্যবহার করেছে। প্রথমেই হামলাকারীরা গুলি করে টুটুলকে লক্ষ্য করে। টুটুল লুটিয়ে পড়ার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়।

 গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয় ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা চলার সময়। রাত ৯টায় মেলা থেকে বেরিয়ে তিনি বিপরীত দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাগোয়া ফুটপাথ দিয়ে এগোচ্ছিলেন টিএসসির দিকে। তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখনকার মতো সরব না থাকায় ওই সময়টাতে ফুটপাথের ওই পাশটা ছিল অনেকটাই নির্জন। হামলার পর হুমায়ুন আজাদকে যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল, তখন তার মুখ, মাথা ও গলা থেকে রক্ত ঝরে বুক ভেসে যাচ্ছিল। এই লেখকের ভাই মঞ্জুর কবির হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, অজ্ঞান হুমায়ুন আজাদের মাথা, কাঁধ ও হাত পর্যন্ত ব্যান্ডেজ। হামলার পরপরই হুমায়ুন আজাদকে হাসপাতালে নেওয়া গিয়েছিল, তাতে তিনি তখন বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে পৌঁছানোয় দেরি হয় আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যুর কথা জানান চিকিৎসকরা। বইমেলা চলার ঠিক এমনই একদিনে হামলার শিকার হন অভিজিৎ একই কায়দায়। হুমায়ুন আজাদের হামলার স্থানে চাপাতি পাওয়া যায়। অভিজিতের হামলার স্থানেও পাওয়া গেছে চাপাতি। ঠিক একই কায়দায় হামলার ঘটনা ঘটে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর