রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন বিএনপিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ড ও শমসের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগ নিয়ে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহমূলক বক্তব্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতে। দলের একজন আধা রাজনীতিবিদের’ অবসরে যাওয়ার ঘোষণায় সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা বিএনপিকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করছেন। এ নিয়ে পদত্যাগী নেতাকে অভিনন্দন জানাতেও ভুল করেনি ক্ষমতাসীন দল। বিএনপি ভেঙে খান খান হয়ে যাবে এমন মন্তব্য করতেও ছাড়েননি আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা। বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি, তাই সবকিছুতেই তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। ছোটখাটো যে কোনো ঘটনাকেই তারা বড় করে দেখে। শমসের মবিনের পদত্যাগ নিয়ে তারা যেভাবে উল্লাস প্রকাশ করছে, তা তাদের এক ধরনের বিকৃত’ মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। শমসের মবিনের পদত্যাগে দলে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মন্তব্য করে দলটি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগের যে কিসে আনন্দ, কিসে নিরানন্দ তা-ই বুঝতে পারি না। একজন মানুষ মারা গেলেও তারা আনন্দ করে, আবার একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ বেঁচে গেলেও আনন্দ করে। তারা ঠিকমতো দেশ চালাতে পারছে না। এখন একজন আধা রাজনীতিবিদ বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন, তা নিয়ে তাদের আনন্দের শেষ নেই।’

তার মতে, বিএনপি প্রতিষ্ঠায় শমসের মবিনের কোনো ঘাম ঝরেনি। চাকরি শেষ করে বিএনপিতে আসেন তিনি। তার ওপর অজানা চাপও থাকতে পারে। তা ছাড়া তিনি তো আওয়ামী লীগে যোগ দেননি। তাদের উল­সিত হওয়ার তো কোনো কারণ দেখতে পাই না। শমসের মবিন যে বিএনপিতে আবার ফিরবেন না, তার কোনো গ্যারান্টি কি আওয়ামী লীগ দিতে পারবে? তবে আওয়ামী লীগের বিকৃত মানসিকতা হলো, অন্যের কষ্টে তারা আনন্দ পায়। কিন্তু এসব করেও নিজেদের পতন তারা ঠেকাতে পারবে না।’

বিএনপি নেতারা বলেছেন, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরাও সুষ্ঠু তদন্ত চাই। কিন্তু তদন্তের আগেই সরকারপ্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্তমূলক এমন মন্তব্য করেছেন, এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে। এটা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সরকারের দায়িত্ব হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। সেখানে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সেদিকে নজর না দিয়ে সরকার এখন বিএনপি ভাঙতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। দলের নেতাদের ওপর নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করছে। একজন নেতার অবসরে যাওয়া নিয়ে সরকারি দলের নেতারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে তাদের দেউলিয়াত্বই প্রকাশ পাচ্ছে।

তবে সরকারসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বিশেষ করে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপক ও দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে বিপদে ফেলতে চায় বিএনপি-জামায়াত। শিয়া সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনাও একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বার্ষিকীকে ঘিরে এ ধরনের তৎপরতা চালাতে পারে। লক্ষ্য, যে কোনো মূল্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করা। এ জন্যই বিএনপি-জামায়াত ক‚টনৈতিক মহলেও লবিস্ট নিয়োগ করছে। উদ্দেশ্য, সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। এ জন্যই বিএনপি-জামায়াতকে চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শমসেরের পদত্যাগ নিয়ে আওয়ামী লীগ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের আনন্দিত হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। তাদের আনন্দিত হওয়ার আর তেমন কোনো কারণ নেই বলেই বোধ হয় একটু আনন্দিত হয়েছে। যারা যা ভাবে, তারা সেটাই বলতে পছন্দ করে। এটা যদি তাদের (আওয়ামী লীগ) নেতাদের স্বপ্ন হয়, তাহলে আমি বলব, সেটা দুঃস্বপ্ন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি, তাই তাদের সবকিছুতেই আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। সামান্য কোনো ঘটনাকেই তারা বড় করে দেখে। শারীরিক অক্ষমতায় একজন মানুষ অবসরে গেছেন, এ ঘটনাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ যেভাবে উল্লাস প্রকাশ করছে, তা কাম্য হতে পারে না।

সর্বশেষ খবর