রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
আবুল কাসেম ফজলুল হক

আমি তাদের বিচার চাই না

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমি তাদের বিচার চাই না

ছেলে ফয়সাল আরেফিন দীপনের শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের প্রকাশনা কার্যালয়ের তালা ভেঙে রক্তাক্ত দেহ বের করে নিয়ে আসেন বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে একমাত্র পুত্র। তারপরও শেষ চেষ্টা হিসেবে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ডাক্তাররা মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। কিন্তু ততক্ষণে যেন অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন বরারবই মৌলবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা আবুল কাসেম ফজলুল হক। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বললেন, ‘হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি তাদের বিচার চাই না।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার, অভিজিৎ রায়ের বইয়ের অন্য প্রকাশকদের ওপর যারা হামলা করেছে তারাই দীপনের উপরও হামলা চালিয়েছে। তারা অন্যদের ঘটনাস্থলে মারতে পারেনি। দীপনকে মারতে পেরেছে। হতাশ বাবা বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি তাদের বিচার চাই না। তিনি বলেন, দুপুর দেড়টা পর্যন্ত (গতকাল) ফয়সাল বাসায় আমার সঙ্গেই ছিল। পরে সে শাহবাগে তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে যায়। পরে খোঁজ নেওয়ার জন্য আমি কয়েকবার তাকে ফোন করি। সে (দীপন) ফোন ধরেনি। পরে আমি শাহবাগে তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে যাই। বিকাল ৪টার দিকে আমি তার কার্যালয় আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় ১৩১ নম্বর রুমের সামনে যাই। ওই সময় কার্যালয়টি ভেতর থেকে বন্ধ অবস্থায় দেখি। তবে কার্যালয়ের কাচের দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল, ভেতরে আলো জ্বলছে। আমি ভেবেছিলাম, ছেলে বাইরে গেছে। তাই সেখান থেকে চলে আসি। পরে ছেলের বউ ফোন করলে জানতে পারি, লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ কথা শুনে আমি লোকজন নিয়ে ছেলের কার্যালয়ে গিয়ে দরজা ভেঙে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ওই অবস্থায় ফয়সাল আরেফিনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্বজনরা জানান, বরাবরই মেধাবী দীপনের বন্ধুদের বেশির ভাগই দেশের বাইরে চলে গেলেও দেশ ছেড়ে যেতে দীপনের ছিল বড় অনীহা। প্রকাশনা সংস্থাটিকে ঘিরে ছিল তার অনেক স্বপ্ন। ব্যবসায়িক দিক থেকে জাগৃতি প্রকাশনী কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান না হলেও এটিকে নিয়েই থাকতে চেয়েছিলেন দীপন। দীপনের একমাত্র বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর