বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আবার বাংলাওয়াশ

মেজবাহ্-উল-হক

আবার বাংলাওয়াশ

দানে দানে তিন দান। তৃতীয়বারের মতো বাংলাওয়াশ জিম্বাবুয়ে। বছরের শেষ সিরিজ জিতে ট্রফি হাতে টাইগাররা -রোহেত রাজীব

বিশ্বকাপ থেকে টাইগাররা বিজয়ের যে চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করেছিল, গতকাল মিরপুর শেরেবাংলায় জিম্বাবুয়েকে বাংলাওয়াশ করে নতুন আরেকটি অধ্যায় সংযোজন করলো! তবে এ অধ্যায়ে থাকছে না কোনো উত্তেজনা কিংবা রোমাঞ্চ। তবে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাওয়াশ করায় টাইগারদের বীরত্ব গাথা লেখা  থাকবে অধ্যায়ের প্রতিটি লাইনেই।

প্রথম ম্যাচে ১৪৫ রানের বড় জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যবধানটা ছিল ৫৮ রানের। শেষ ম্যাচে গতকাল লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিলেও কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের ম্যাজিকে পাত্তাই পায়নি। বাংলাদেশ জিতে যায় ৬১ রানের বড় ব্যবধানে। ৩-০তে সিরিজ হারলেও সফরকারীদের সান্ত্বনা এটুকুই যে, তৃতীয় ওয়ানডেতে অন্তত ২০০ রানের কোটা পার করতে পেরেছে। আবারও পাঁচ উইকেট শিকার করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। আট ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন মাত্র ৩৪। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম ম্যাচেই তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট শিকারের গৌরব অর্জন করেন সাতক্ষীরার সুপারম্যান।

প্রথম দুই ওয়ানডেতে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু গতকাল টস জিতেও প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মাশরাফি। তারপর দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (৭৩) ও ইমরুল কায়েসের (৭৩) জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে শক্ত ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৭৬ রানের লড়াকু স্কোর করে স্বাগতিকরা। ২৭৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মুস্তাফিজের কাটারে বিধ্বস্ত হয়ে ২১৫ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়েই ইনিংস। তবে ৫ উইকেট শিকারের পরেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাননি কাটার মাস্টার। ম্যাচের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তামিম ইকবালকে। আর সিরিজ সেরা হয়েছেন মুশফিকুর রহিম।

প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচের মতো শেষ ম্যাচেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে সফরকারীরা। আসলে লড়াই হয় সেয়ানে সেয়ানে। সবল আর দুর্বলের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে কী লড়াই বলা যায়! সেখানে থাকে কেবল ‘আধিপত্য বিস্তার’ কিংবা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে ম্যাচেও এখন সে চিত্র! এক সময় দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো সমানে সমান। আর এখন টাইগারদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগেই হেরে বসে জিম্বাবুয়ে। গত এক বছরেই দুই দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বৈসাদৃশ্য। এই সময়ের মধ্যে টাইগার সাফল্যের গ্রাফটা যেমনি জ্যামিতিক হারে উপরের দিকে উঠেছে, তেমনি নানা জটিলতায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট নেমেছে নিচের দিকে।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজ হেরে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশে এসেছিল জয়ের আশা নিয়ে। উল্টো ওয়ানডে সিরিজে হয়ে গেল হোয়াইটওয়াশ। আর এই সিরিজে টাইগারদের পাওয়ার খুব বেশি কিছু ছিল না, তবে হারানোর ভয় ছিল ঢের। এক ম্যাচ হারলেই র?্যাঙ্কিংয়ে একটা বড় প্রভাব পড়ে যেত। অথচ তিন ম্যাচ জিতেও বাংলাদেশের বেড়েছে মাত্র এক রেটিং পয়েন্ট। তবে টাইগারদের বড় প্রাপ্তি হলো আত্মবিশ্বাসের পালে বাড়তি হাওয়া লাগানো।

কয়েক বছর আগেও অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের মতো ক্রিকেট পরাশক্তি দলগুলো বাংলাদেশকে বলে-কয়ে হারিয়ে দিতো। এখন টাইগাররাও জিম্বাবুয়ের মতো দলগুলোকে ঘোষণা দিয়েই হারায়। শুধু জিম্বাবুয়ে কেন, ক্রিকেট পরাশক্তি দলগুলোই তো মাঝে মধ্যে পাত্তা পায় না। তার বড় প্রমাণ তো পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টানা সিরিজ জয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবার জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জয় করলো টাইগাররা।

সর্বশেষ খবর