বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারত রাজি

স্বরাষ্ট্র সচিব বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বাংলাদেশের দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করেছে ভারত। এ জন্য তারা আন্তরিকভাবে কাজ করবে বলেও জানিয়েছে। গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধে দুই দেশের নাগরিকদেরও সচেতন করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। এ ছাড়া বন্দী বিনিময়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, দুই দেশই নিজ নিজ দেশের  কারাবন্দী নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে নিতে চাইছে।

গতকালে সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকের পর বিকালে দুই দেশের সচিবদের মধ্যে কার্যবিবরণীর ওপর স্বাক্ষর হয়। তবে এটি কোনো চুক্তি নয়- জানিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা দুই দিন যে আলোচনা করেছি, তার ওপর একটি কার্যবিবরণী হয়েছে। তার ওপর স্বাক্ষর করতে হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, সচিব পর্যায়ে বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- সীমান্তে গুলিবর্ষণ যেন শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। আমাদের টার্গেট সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। তিনি বলেন, সীমান্তে যেন উত্তেজনার সৃষ্টি না হয়, এ জন্য অবশ্য দুই দেশের নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে যাতে করে তারা তাদের সীমান্ত অতিক্রম না করে। আর আন্তর্জাতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলে। তাহলে আমার মনে হয় যে, বিএসএফ এবং বিজিবির দায়িত্ব পালন সহজ হবে এবং এ ধরনের কিলিং ইনসিডেন্স ঘটবে না। বন্দী বিনিময়ের বিষয় উলে­খ করে মোজাম্মেল হক খান বলেন, আমাদের দেশের কারাগারে কিছু ভারতীয় নাগরিক আছে। তাদের দেশের কারাগারেও আমাদের নাগরিক আছে। তাদের যাতে তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে পারি এবং নিতে পারি সে ব্যাপারে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশি অপরাধীদের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো টাইম লিমিট নেই, যত দ্রুত সম্ভব তারা আমাদের সহযোগিতা করবে। তিনি জানান, ভারতে ৬২ জনের মতো বাংলাদেশি আটক আছে। মোজাম্মেল হক খান বলেন, বৈঠকে মাদক বিষয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা জানি বাংলাদেশ কখনোই মাদক উৎপাদক দেশ নয়। তারপরও ট্রাফিকিং হয়। আমরা এ ব্যাপারে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তিরি বলেন, ওই দেশ ফেনসিডিল তৈরি করে। এটা তাদের জন্য একটি ড্রাগ। কিন্তু আমরা মনে করি এটি একটি মাদক। ভারত কর্তৃপক্ষ এ উদ্বেগের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে এবং এ ব্যাপারে তারা আরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, সমুদ্রসীমায় যাতে বিদেশি ট্রলার আসতে না পারে, আমাদের সমুদ্র যেন পাচারের রুট না হয়- সে ব্যাপারেও ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছি, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে যায়। তারা আমাদের কথা স্বীকার করেছেন এবং তারা সতর্ক অবস্থায় থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। সচিব আরও জানান, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো আস্তানা বাংলাদেশে নেই, তৎপরতাও নেই। এ বিষয়টি আমরা তাদের জানিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা  কোনো তথ্য পেলে আমাদের জানাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত এক বছরে ভারতের নাগরিকরাও নিয়ম অমান্য করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। মাদক চোরাচালানের সময় আটজন মারাও গেছেন। স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, গতকালের বৈঠক অতীতের চেয়ে সফল ও সন্তোষজনক হয়েছে। স্বাধীনতার পর এটি ছিল সপ্তদশ বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র সচিব ছাড়া পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক, বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদসহ ১৮ জন এবং ভারতের দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজিব মেহর্ষীসহ ১৫ জন অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর