রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিস্মিত হতবাক বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় হতবাক, বিস্মিত ও হতাশ হয়েছে বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। রায়ের চূড়ান্ত ধাপ পর্যন্তও এ নিয়ে দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর বিশ্বাস ছিল, সাকা চৌধুরীর ফাঁসি হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সাকা পরিবারও এ ক্ষেত্রে চরম আত্মবিশ্বাসী ছিল। মাঝেমধ্যে আদালতে এসেও সাকা চৌধুরী বলেছেন, এ আদালত তার ফাঁসি দিতে পারবে না।

গত রাতে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তাদের কণ্ঠে হতাশার রেখা ফুটে উঠতে দেখা গেছে। দলের সহকর্মীর এ অবস্থাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তারা। অবাক ও বিস্ময়ের সঙ্গে এক নেতা বলেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। দলের একাংশ বলছেন, সাকার দম্ভ, লাগামহীন উচ্চারণ এবং কাউকে পরোয়া না করার ব্যঙ্গাত্মক বহিঃপ্রকাশই তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীরব ও নিশ্চুপ থাকলে হয়তো তাকে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। শুধু সরকারই নয়, সেনাবাহিনী, নিজ দল বিএনপিসহ সবকিছু সম্পর্কেই ছিল তার তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্য। পারিবারিকভাবে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লোক বলেও মনে করতেন। তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না- এ বিশ্বাসটি তাকে আরও অহংকারী করে তুলেছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক বিবেচনাটাই বেশি, অপরাধ নির্ণয় করার বিষয়টি গৌণ। সরকার যেহেতু আগাম জেল-ফাঁসির কথা বলে, যার কারণে জনগণের কাছে এ সংশয়টা আছে- রায়গুলো সরকার দেয় নাকি আদালত।’ বৃহস্পতিবার বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ন্যায়বিচার পাননি। বিচারের ক্ষেত্রে তার অপরাধের চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে সাকা চৌধুরী ‘পরসিকিউশনের’ শিকার হয়েছেন।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘সাকা চৌধুরীর ফাঁসি হয়েছে, এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ দেশের জাতীয় সংসদের দীর্ঘ সময়ের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। টানা ছয়বার এমপি ছিলেন। তিনি আজ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলেন। একজন দক্ষ আইনপ্রণেতাকে এভাবে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হলো। এটা নির্মম ও বেদনার।’

শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫১তম জন্মদিন উপলক্ষে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে কেক কাটার কর্মসূচি বাতিলের পেছনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায়ও একটি কারণ। দলের এক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেলে, এক নেতার ফাঁসি হতে যাচ্ছে- সার্বিক দিক বিবেচনা করে ঢাকায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতামত নিয়ে কেক কাটার কর্মসূচি বাতিল করেন তারেক রহমান। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক জেলাগুলোতে একই বার্তা পাঠানো হয়। এ কারণে শুধু দোয়া মাহফিলেই তারেক রহমানের জন্মদিন পালন সীমিত ছিল।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, সাকার চূড়ান্ত রায় নিয়ে দলের কোনো প্রতিক্রিয়া থাকবে কিনা- তা নিয়ে ঢাকার নেতারা দ্বিধায় পড়ে যান। এ কারণে চূড়ান্ত রায়ের এক দিন পর দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়। লন্ডন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বার্তা আসার পরই এ নিয়ে কথা বলেন বিএনপি নেতারা। গতকালও রায়ের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সাকার স্ত্রী বলেন, তাদের পাশে বিএনপি রয়েছে। তবে সাকা চৌধুরী ন্যায়বিচার পাননি- বিএনপির পক্ষ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া জানানো হলেও দলটি মূলত এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘জোরালো’ কোনো অবস্থান নেয়নি। কোনো কর্মসূচিও দেওয়া হয়নি বিএনপির পক্ষ থেকে। তার জন্য দলের অনেক নেতার ‘আফসোস’ থাকলেও তারাই বলছেন, ‘বাস্তবতা’ তো মেনে নিতেই হবে। তা ছাড়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যখন অপরাধ করেছিলেন, তখন তিনি বিএনপিতে ছিলেন না। তাই এ ব্যাপারে দলের চুপ থাকাই শ্রেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর