বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শুরু হচ্ছে ভোটযুদ্ধ

৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচন । বিএনপি চায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড

গোলাম রাব্বানী

শুরু হচ্ছে ভোটযুদ্ধ

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় শুরু হচ্ছে ভোটযুদ্ধ। এবারের পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রতীক নৌকা-ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামছেন। পাশাপাশি ইসিতে নিবন্ধিত অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মেয়র প্রার্থীরাও থাকছেন নির্বাচনী মাঠে। এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। দলীয় এ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরির দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গতকাল দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী ৩ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। বৈধ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর। গতকাল দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে নির্বাচন কমিশনে ভোটের এ সময়সূচি ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। সিইসি জানান, স্থানীয় সরকারে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে ভোট হচ্ছে পৌরসভায়। এ ক্ষেত্রে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়াই হবে নির্দলীয়ভাবে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। সব দলের জন্যই পৌরসভা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করব। ব্যালট চুরি ও ছিনতাইয়ের কোনোরকম তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়ার কথাও জানান তিনি। এ ছাড়া এ নির্বাচনে খবর সংগ্রহকালে পুলিশ সাংবাদিকদের বাধা দেবে না বলেও উল্লেখ করেন সিইসি। বর্তমানে দেশে ৩২৩টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেশির ভাগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে নতুন ভোটার তালিকা হবে। তা ছাড়া ওই সময় এসএসসি পরীক্ষা থাকায় ডিসেম্বরে ভোট শেষ করতে চাইছে ইসি। সর্বশেষ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে চার দিনে নির্বাচন উপযোগী প্রায় আড়াই শ’ পৌরসভায় ভোট হয়। এক নজরে পৌর নির্বাচন : ২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র মোট ৩ হাজার ৫৮২টি। সম্ভাব্য ভোটকক্ষ ১৯ হাজার ১৮৭টি। মোট ভোটার ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৬ জন। এতে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ এবং নারী ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪০ জন। ভোটাররা মেয়র পদে ২৩৪, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৩৮ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৯৫২ জন প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা থাকছেন মোট ৬১ হাজার ১৪৩ জন। এ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকছেন ৪১ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), ৬০ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ১৩৩ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ ছাড়া সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

একাধিক প্রার্থী হলে সবার মনোনয়ন বাতিল : নির্বাচন পরিচালনা বিধি অনুসারে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। পৌরসভায় কোনো দল একাধিক প্রার্থী দিলে সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। প্রচারে নিষিদ্ধ মন্ত্রী-এমপি ও মেয়র : কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা বিধি অনুসারে মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন- প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, এমপি এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র।

যেসব পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে- রংপুর বিভাগ : পঞ্চগড়ের পঞ্চগড়। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও ঠাকুরগাঁও। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, দিনাজপুর, বীরগঞ্জ, বিরামপুর ও হাকিমপুর। নীলফামারীর সৈয়দপুর ও জলঢাকা। লালমনিরহাটের লালমনিরহাট ও পাটগ্রাম। রংপুরের বদরগঞ্জ। কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রাম, নাগেশ্বরী ও উলিপুর। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ।

রাজশাহী বিভাগ : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, কালাই ও জয়পুরহাট। বগুড়ার শেরপুর, সারিয়াকান্দি, গাবতলী, সান্তাহার, কাহালু, ধুনট, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ ও বগুড়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ ও নাচোল। নওগাঁর নওগাঁ ও নজিপুর। রাজশাহীর কাঁকনহাট, আড়ানী, মুণ্ডুমালা, কেশরহাট, গোদাগাড়ী, তাহেরপুর, ভবানীগঞ্জ, তানোর, কাটাখালী, চারঘাট, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া। নাটোরের নলডাঙ্গা, গোপালপুর, গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও নাটোর। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, বেলকুচি ও কাজিপুর। পাবনার চাটমোহর, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, পাবনা ও ঈশ্বরদী।

খুলনা বিভাগ : মেহেরপুরের গাংনী। কুষ্টিয়ার মিরপুর, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, কুমারখালী ও খোকসা। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, জীবননগর, আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুণ্ড ও শৈলকুপা। যশোরের নওয়াপাড়া, মনিরামপুর, বাঘারপাড়া, চৌগাছা, কেশবপুর ও যশোর। মাগুরার মাগুরা। নড়াইলের কালিয়া ও নড়াইল। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, মোংলা পোর্ট ও বাগেরহাট। খুলনার চালনা ও পাইকগাছা। সাতক্ষীরার কলারোয়া ও সাতক্ষীরা। বরিশাল বিভাগ : বরগুনার বেতাগী, পাথরঘাটা ও বরগুনা। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও কুয়াকাটা। ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান ও ভোলা। বরিশালের মুলাদী, গৌরনদী, মেহেন্দীগঞ্জ, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুর। ঝালকাঠির নলছিটি। পিরোজপুরের পিরোজপুর ও স্বরূপকাঠি। ঢাকা বিভাগ : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, মধুপুর, টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, ভূঞাপুর, সখিপুর, গোপালপুর ও কালিহাতী। জামালপুরের সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ, জামালপুর, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ। শেরপুরের নকলা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর ও শ্রীবরদী। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ত্রিশাল, ভালুকা, গফরগাঁও, নান্দাইল, ফুলপুর ও ফুলবাড়িয়া। নেত্রকোনার মদন, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা, দুর্গাপুর ও কেন্দুয়া। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ, হোসেনপুর, কটিয়াদী, বাজিতপুর, ভৈরব ও করিমগঞ্জ। মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও মানিকগঞ্জ। মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম ও মুন্সীগঞ্জ। ঢাকার ধামরাই ও সাভার। নরসিংদীর মাধবদী, মনোহরদী ও নরসিংদী। নারায়ণগঞ্জের তারাবো ও সোনারগাঁ। রাজবাড়ীর পাংশা, রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ। ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও নগরকান্দা। গোপালগঞ্জের গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়া। মাদারীপুরের কালকিনি, শিবচর ও মাদারীপুর। শরীয়তপুরের নড়িয়া, ডামুড্যা, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও শরীয়তপুর। সিলেট বিভাগ : সুনামগঞ্জের ছাতক, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ ও দিরাই। সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও গোলাপগঞ্জ। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুলাউড়া ও বড়লেখা। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ।

চট্টগ্রাম বিভাগ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া। কুমিল্লার চান্দিনা, লাকসাম, দাউদকান্দি, বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম ও হোমনা। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ছেংগারচর, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া ও মতলব। ফেনীর দাগনভূঞা, ফেনী ও পরশুরাম। নোয়াখালীর বসুরহাট, চৌমুহনী, হাতিয়া ও চাটখিল। লক্ষীপুরের রামগঞ্জ, রামগতি ও রায়পুর। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, মিরসরাই, পটিয়া, রাউজান, বারইয়ারহাট, রাঙ্গুনিয়া ও সীতাকুণ্ড। খাগড়াছড়ির খাগড়াছড়ি ও মাটিরাঙা। রাঙামাটির রাঙামাটি। বান্দরবানের লামা ও বান্দরবান।

ব্যালট ছিনতাইয়ের খবর পেলেই অ্যাকশন : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। সব দলের জন্যই পৌরসভা নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করব। পৌর নির্বাচনে আগের চেয়ে আরও দ্রুত অ্যাকশন নেব। ব্যালট চুরি ও ছিনতাইয়ের কোনো তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়ার কথাও জানান তিনি। এ ছাড়া এ নির্বাচনে খবর সংগ্রহকালে পুলিশ সাংবাদিকদের বাধা দেবে না বলেও উল্লেখ করেন সিইসি। গতকাল নির্বাচন কমিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।  আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোট গ্রহণের তারিখ রেখে তফসিল দেন সিইসি। কাজী রকিবউদ্দীন বলেন, আশা করি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থীরা স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই পোস্টার নামিয়ে ফেলবেন। যদি না নামান তাহলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে সবার জন্যই লেবেল প্লেয়িং তৈরি করব। আশা করি সব দলই অংশ নেবে। বিএনপি আগেও যখন অভিযোগ দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমেও খবর এলে, অথবা ফোনেও খোঁজ নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তিনি বলেন, মেয়র পদে দলীয়ভাবে এবং কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে অসুবিধা হবে না। তবুও এটি বড় নির্বাচন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেব। বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে সভা করেই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর