বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

দেশে সুশাসনের শীর্ষে এনবিআর

নজিবুর রহমান

রুহুল আমিন রাসেল

দেশে সুশাসনের শীর্ষে এনবিআর

সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেছেন, তার জিরো টলারেন্স নীতির কারণে দেশে এখন সুশাসনের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি বছর ১১ জানুয়ারি এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সারা দেশে রাজস্ব   প্রশাসনের দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছিলেন নজিবুর রহমান। এখন তার দাবি, দেশে সুশাসনের আওতায় যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এনবিআর সেখানে প্রথম অবস্থানে আছে।

সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে নিজ কক্ষে দেশের সামগ্রিক রাজস্ব পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজস্ব খাতে আইন প্রয়োগ বা এনফোর্সমেন্টের ক্ষেত্রে এনবিআর অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয়। আমাদের সহকর্মীরা উৎসাহিত হয়েছেন। এর প্রমাণ হলো, এনবিআরের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থাই আগের চেয়ে বর্তমানে বেশি সচল করতে পেরেছি। আমাদের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সুনাম এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় কর গোয়েন্দা সংস্থা “সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেল” বা সিআইসিকে মানিলন্ডারিং আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আগে ভ্যাট গোয়েন্দা দুর্বল ছিল, এখন তারাও দুর্বলতা কাটিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে।’ তার মতে, এনবিআরের অংশীজনেরা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি আস্থা রাখছেন। আগামী প্রজন্মও রাজস্ব আয় বাড়াতে এগিয়ে আসছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণরা সরকারকে রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম উৎসাহ প্রদানে এগিয়ে আসছেন। কয়েকজন তরুণ নিজ উদ্যোগে এনবিআরকে মুঠোফোনে ভ্যাট চেকার অ্যাপ তৈরি করে উৎসাহী করেছেন। রাজস্ব আয়ে সামগ্রিক চিত্র ও ঘাটতি প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এই সচিব বলেন, রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সব অংশীজনকে নিয়েই এনবিআর কাজ করছে। রাজস্ব আয়ে সব ধরনের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এনবিআরের বোর্ড প্রশাসন থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসন ভালোভাবেই কাজ করছে। তার মতে, রাজস্ব প্রশাসন দেশের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করে চলে। অনেক ক্ষেত্রে এই গতিশীলতা আনতে সময় লাগে। তবে চলতি অর্থবছর এক লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা এনবিআরের ওপর রয়েছে, তা সম্মিলিত প্রয়াসে অর্জন সম্ভব। কারণ আমাদের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা নজিবুর রহমান রাজস্ব আয়ের বিষয়টি নিজেই মনিটর করছেন জানিয়ে বলেন, ‘মনিটরিংয়ের পাশাপাশি আমি সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও কার্যকর যোগাযোগ করেই কাজ করছি। কেননা এনবিআর তিন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে আমদানি ও রপ্তানি বাড়লে রাজস্ব আয় বাড়ে। পুঁজিবাজার সক্রিয় হলে রাজস্ব আয় বাড়ে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায়ে আমরা যোগাযোগ রাখছি। এর সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাওনা বকেয়া আদায়ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসিসহ জ্বালানি খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা পায় এনবিআর।’

পাসপোর্ট অধিদফতর ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছেও এনবিআরের বকেয়া রাজস্ব পাওনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক অজ্ঞাত পাওনা আছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ বকেয়া পাওনা আগের চেয়ে এখন আরও বেশি হবে। আদালতে বিচারাধীন ২৬ হাজার মামলার বিপরীতে আমাদের ৩১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে। বিচারাধীন মামলার বিপরীতে এই রাজস্ব আদায়ে আমরা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিমূলক ব্যবস্থা বা এডিআর জোরদার করছি।’ তিনি বলেন, ‘আগামী বছর নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে আমাদের প্রস্তুতি আছে। এ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২৯ নভেম্বর সারা দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে এনবিআর ও এফবিসিসিআই আয়োজিত পার্টনারশিপ সংলাপে ভ্যাট অনলাইন কার্যক্রমের প্রস্তুতি শোনাব। নতুন ভ্যাট আইন অনেক সম্ভাবনা তৈরি করবে। এ জন্য ব্যাপকভাবে সহকর্মী ও অংশীজনদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ আইন সম্পর্কে দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ভ্যাটের সার্বিক কার্যক্রম সফটওয়্যারের মাধ্যমে মনিটর করা হবে।’ রাজস্ব খাতের নতুন সম্ভাবনার কথা জানতে চাইলে নজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা জনগণের ওপর আর করের বোঝা চাপাব না। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অমিত সম্ভাবনা আছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে।’ তার মতে, ‘কাস্টমসের লক্ষ্য বাণিজ্য-সহায়তা বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে আমরা শুল্কনীতি উদারীকরণ করেছি। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি যাচাই করছি। দেশের বিভিন্ন শুল্কবন্দরে চীনের চারটি মোবাইল স্ক্যানার এনেছি। এতে বন্দরের নিরাপত্তা বেড়েছে।’ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সৎ ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে সুবিধা দেওয়া হবে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সৎ ব্যবসায়ীদের তালিকা করছি। তাদের বিনা তল্লাশিতে আমদানি-রপ্তানির সুবিধা দেওয়া হবে। বিশ্ব শুল্ক সংস্থার (ডব্লিউসিও) নিয়ম মেনেই এ সুবিধা দেশের ব্যবসায়ীরা পাবেন।’ আমদানিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের শুল্কবন্দরগুলোতে মেধাবীদের পদায়ন করছি। এনবিআরেও নিখুঁতভাবে পদায়ন করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর