বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আরও বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরও বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে কোনো বাধা নেই বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। তার মতে, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে সর্বোচ্চ ফেরত পাওয়া সম্ভব। তাই আমি পরিষ্কারভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশ এখন আগামীর বিনিয়োগ লক্ষ্যস্থল। আমাদেরও বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগ পেতে আমাদের সরকার আন্তযোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কারণ ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এখন বাংলাদেশের উচিত ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করে বাণিজ্য বৈষম্য কমানো।’ গতকাল রাজধানীর মতিঝিলের চেম্বার ভবনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী আবরার এ আনোয়ার, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন, বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম. মাসরুর রিয়াজ, সাবেক সভাপতি রাশেদ মাকসুদ খান, সাবেক ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এম এস সেকিল চৌধুরী প্রমুখ। সেমিনারে ড. গওহর রিজভী বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। তিনি দেশের বেসরকারি খাতকে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। সহসাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি অর্জনে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করবে।’ তিনি দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিশেষ দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বহির্বিশ্বে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বাড়াতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ ও এসডিজি অর্জনে আমাদের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আরও উন্নত করতে হবে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। তার মতে, বাংলাদেশ ইউরোপসহ অন্যান্য উন্নত দেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করে। এ সুবিধা ভোগ করে বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে আরও বেশি হারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য রেগুলেটরি বা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রতিবন্ধকতা আরও কমাতে হবে। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অংশীদারি আশাব্যঞ্জক নয়। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অংশীদারির পরিমাণ মাত্র ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। তার মতে, বার্ষিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের সমন্বয়ের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দেশের বেসরকারি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং ২০১৫ সালের মধ্যে রপ্তানি আয় ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ বজায় আছে। ফলে গত এক দশকে ৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের রয়েছে শক্তিশালী স্থানীয় বাজারব্যবস্থা এবং কঠোর পরিশ্রমী ও উদ্যোগী উদ্যোক্তাশ্রেণি। আগামী ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করে ১০ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এখানে। এতে রপ্তানি আয় আরও ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়বে।

সর্বশেষ খবর