বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
কলকাতার চিঠি

পাকিস্তানের তিন গুপ্তচর যেভাবে ধরা পড়ে

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

পাকিস্তানের তিন গুপ্তচর যেভাবে ধরা পড়ে

ইরশাদ আনসারি। মহম্মদ জাহাঙ্গীর। আশফাক আনসারি। এরা কারা? এ তিনজনের নাম কেউই জানত না। গত ৪৮ ঘণ্টায় গোটা ভারতের মানুষ জেনে গেছে এ তিনজন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইর সক্রিয় এজেন্ট। কলকাতার বন্দর এলাকায় গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডিংয়ের তথ্য পাকিস্তানে পাচার করছিল কলকাতায় বসেই। এরা প্রত্যেকেই পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ বলে প্রমাণ পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। এদের মধ্যে ইরশাদ আনসারি গার্ডেনরিচেরই তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আর ওই সংগঠনের নেত্রী হলেন একদা নকশালপন্থি এবং বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পরামর্শদাতা দোলা সেন। ইরশাদের ছেলে আশফাক একটি কলেজে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সাধারণ সম্পাদক। এ তিনজনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার কিছু আগে নেপাল ও বাংলাদেশ হয়ে কলকাতায় ঢোকে। গার্ডেনরিচ এলাকা থেকে আটবারের কংগ্রেস বিধায়ক রামপেয়ারি রামকে সাড়ে চার বছর আগে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য মমতার কাছে সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু রামপেয়ারিকে টিকিট না দিয়ে একদা রাজাকার এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরোধী ববি হাকিমকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এই ববির অন্যতম ঘনিষ্ঠ এক সমাজবিরোধী হলো ফিরোজ আলম খান। মধ্যপ্রাচ্যে মহিলা পাচার থেকে হেন কোনো দুষ্কর্ম নেই যা সে করেনি। ববি ঘনিষ্ঠ বলেই পুলিশ তাকে ধরতেও সাহস পায় না। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় পুলিশের খুনিদের গ্রেফতার করার অনুমতিও পায় না পুলিশ। গার্ডেনরিচ থেকে তিন আইএসআই চর ধরা পড়ার সময় ববি হাকিম কিন্তু দেশে নেই। তিনি বর্তমানে রিয়াদে। পাক গুপ্তচর এবং তৃণমূল নেতাদের এই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ভালোভাবে নেয়নি সিপিএমসহ বিরোধী দলগুলো। তিন পাক চরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, জাল নোট রাখা, ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কলকাতায় লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানের চরদের সঙ্গে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এ যোগাযোগ সম্ভবত বাংলাদেশসূত্রেই ঘটেছে। ধৃত আশফাক আনসারি সাম্প্রতিককালে একাধিকবার বাংলাদেশ সফর করেছে। এখানকার তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে আইএসআই এবং জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এই তিন পাক চরের। গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্সের হয়ে কাজ করতে গিয়ে অফিস থেকে নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করত ইরশাদ। গার্ডেনরিচে সম্প্রতি দুটি যুদ্ধজাহাজ তৈরি হয়েছে। বাবার কাছ থেকে তথ্য এবং ছবি নিয়ে বাংলাদেশে আইএসআই এজেন্টদের হাতে তুলে দিত আশফাক আনসারি। উত্তরপ্রদেশের মিরাটে ধরা পড়া মহম্মদ কালাম ওরফে ইজাজকে জেরা করে গার্ডেনরিচে এ আইএসআই চরদের খোঁজ পান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ’র অফিসাররা। তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে এ তিনজনকে গ্রেফতার করে স্পেশাল টাস্কফোর্স। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, খাগড়াগড়ের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশের নাগরিক শাকিল গাজী দর্জির পরিচয় নিয়ে এ মেটিয়াবুরুজেই থাকত। এর কিছু দিন আগেই ওই এলাকায় এক শক্তিশালী বিস্ফোরণে দুজন মারা গিয়েছিল। সে বিস্ফোরণ যে খুব সাধারণ ছিল না সে ব্যাপারে নিশ্চিত গোয়েন্দা কর্তারা। প্রথমত খাগড়াগড় আর পরে গার্ডেনরিচ দুটো ঘটনাতেই তৃণমূলের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রীতিমতো অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গরাজ্যটির শাসকদলের কাছে। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ হওয়া বাড়িটির এক তলায় ছিল তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। শাকিল গাজীকে মেটিরাবুরুজে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল মিমি।

সর্বশেষ খবর