সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিশ্ব অর্থনীতির নতুন খেলোয়াড় বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনীতির নতুন খেলোয়াড় বাংলাদেশ

ড. কৌশিক বসু

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসু বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির নতুন খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বাংলাদেশ। কেননা বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ আগামী দিনের এশিয়ার টাইগারও বটে। চলতি বছর ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আর ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছেন কৌশিক বসু। কর্মসংস্থান বাড়াতে ব্যবসায়িক পদ্ধতি সহজ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ নীতিতে গরিবের স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা সফররত প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. কৌশিক বসু গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত গণবক্তৃতায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরুপাক্ষ পাল। ‘বিশ্ব অর্থনীতি, বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক টানা ৪০ মিনিটের বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইউএসএ, ইউকেসহ বিশ্বব্যাপী ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। এটা কমাতে হলে ধনীদের ওপর করারোপ বাড়াতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। এর জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতাকে ঠিক করতে হবে। বেকার সমস্যার সমাধানে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হবে। অবকাঠামোর সমস্যার সমাধান করতে হবে দ্রুত। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এই প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, এখন এ দেশের উন্নয়ন চোখে পড়ছে। ব্যবসায়িক মূল্যবোধ ঠিক থাকলে দেশে উন্নয়ন বাড়বেই। এখন পর্যন্ত দেশের মোট জাতীয় আয়ের ২৯ শতাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে। এ বিনিয়োগ যদি ৩৪ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত নেওয়া যায় তাহলে সহজেই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে। অধ্যাপক ড. কৌশিক বসু বলেন, শুধু নীতি নয়, অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থা। শুধু ভালো নীতি একটি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে না। এর জন্য নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি তদারকি ব্যবস্থারও উন্নয়ন করা জরুরি। একই সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটালেই অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়াবে। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ১৯৯২ সালে প্রথমবার ঢাকায় এসে যা দেখেছিলাম, তখনকার ঢাকা আর ২০১৫ সালের ঢাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য। এর মধ্যে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে অনেক সমস্যাও রয়েছে। আগে যানজট ছিল না। এখন রাত ১০টার পরও যানজট চোখে পড়ছে। পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু এ দেশের উন্নয়নই নয়। এ উন্নয়ন সারা বিশ্বে প্রভাব ফেলছে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ার নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের অবস্থান ভৌগোলিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ সুবিধাকে কাজে লাগাতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশকে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ইউএসএ, ইউকে, জাপানসহ আরও অনেকেই নানা ধরনের প্রেসক্রিপশন দেবে। যা তারা দিয়েও আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোন প্রেসক্রিপশনটা গ্রহণ করবে, সেটা সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশই। যেটা সামগ্রিকভাবে ভালো সেটাই গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক নীতির কিছু বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিশ্বায়ন কি ভালো না খারাপ। এটা নিজেদের ঠিক করতে হবে। নতুন প্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করছে। কিছু দেশ এ থেকে সুবিধা নিতে পেরেছে, কেউ পারেনি।  বাংলাদেশের উন্নয়ন চায়নার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। চায়না উত্পাদনশীল খাতের মাধ্যমে উন্নয়ন করেছে। বাংলাদেশে সস্তা শ্রম আছে, এটাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির সুযোগ আছে। বাংলাদেশে অনেক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নাগরিক আছেন। তাদের ব্যবহার করা প্রয়োজন। বড় বড় কোম্পানি এখানে ব্যবসা করতে আসবে, মুনাফা নিয়ে যাবে। তবে তারা কী নিয়মে থাকবে তা নিজেদের ঠিক করতে হবে। ভালো মানের একটা নীতিমালা অনেক কিছু দিতে পারে দেশকে। বাংলাদেশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে অনেক ভালো করছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি পারে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে। কৌশিক বসু বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বেশি রিজার্ভ কোনো সমস্যা নয়। বড় আকারের রিজার্ভ অনেক দেশেরই রয়েছে। তবে এটা শুধু বেশি থাকলেই হবে না। এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত্ করেন। আজ তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করবেন। এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগ দেবেন তিনি। গণবক্তৃতায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। দর্শক সারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

সর্বশেষ খবর