শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ শক্তিতে মাঠে দুই দল

ভোটের রাজনীতিতে চাঙ্গা হচ্ছে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

সর্বোচ্চ শক্তিতে মাঠে দুই দল

পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে ফিরতে চায় বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় স্থবির ছিল বিএনপির রাজনীতি। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও ছিল না দলটির। আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে ফের রাজনীতিতে ফিরছে দলটি। এ উপলক্ষে চাঙ্গা হয়ে উঠছে বিএনপির তৃণমূল। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও দেশজুড়ে সফর করছেন। মামলায় আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। জামিনে মুক্তি মিলেছে অনেক নেতা-কর্মীর। সুষ্ঠু ভোট প্রত্যাশা করছে বিএনপি। এতে গণতন্ত্রের বিজয় হবে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আন্দোলন নয়, নির্বাচনের মাধ্যমেই এ সরকারকে ঘায়েল করা হবে।’ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ৮০ ভাগ পৌরসভায় বিজয়ী হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ‘ভোট ডাকাতির শঙ্কা’ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। অতীতের মতো ভোটের আগে নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় দলটি। মোটামুটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে অন্তত ৮০ ভাগ পৌরসভায় ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন বলেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে। হেরে গেলেও তাতে লাভের অঙ্ক কষা হচ্ছে। উভয় বিষয় নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিষয়টি তুলে ধরার জন্য দলের একটি অংশ কাজ করে যাচ্ছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের কাছে বিএনপির বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জনগণ মোটামুটিভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার পেলে ৮০ ভাগ পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। কিন্তু সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের অপতত্পরতা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ন্যূনতম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হয়নি। সারা দেশেই বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এবার যদি জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তা হবে ইতিহাসের জঘন্যতম নির্বাচন। জনগণের ঘৃণা ছাড়া এ সরকার আর কিছুই পাবে না। আগামী দিনের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়বে।’ জানা যায়, নির্বাচনের পর রাজনীতিতে নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করবে। এরপর দলের কাউন্সিল করবে। এতে দলের নির্বাহী কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। বিগত আন্দোলন ও নির্বাচনকে ঘিরে নিষ্ক্রিয় নেতাদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। একইভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যেসব নেতা বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন, তাদের ব্যাপারেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে এ নোটিস পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না— ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, নির্বাচন বর্জন করার মধ্যে কোনো সফলতা নেই। অতীতে যে নির্বাচনগুলো বর্জন করা হয়েছে তাতে বিএনপি কোনো সুফল পায়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি যে পরিস্থিতির মধ্যে ছিল, তা কাটিয়ে উঠতে নির্বাচনই মোক্ষম সুযোগ। মামলা, হামলাসহ নানা কারণে মাঠ পর্যায়ে আড়ালে থাকা নেতা-কর্মীরা বেরিয়ে আসছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি উপকৃত হচ্ছে। তা ছাড়া সরকারের নানা অনিয়ম নিয়েও দেশবাসীর কাছে বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। ভোটে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অপকর্ম গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এতে লাভে রয়েছে বিএনপি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, আমরা নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত টিকে থাকতে চাই। সরকারকে সেই পরিবেশ তৈরির জন্য বার বার অনুরোধ করছি। কিন্তু সরকার, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন বিরোধী দলের প্রার্থীদের সঙ্গে যে আচরণ করছে, তাতে মনে হয় না, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আছে। নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছেন। মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতা। দেশের উত্তরাঞ্চল সফর করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের আহ্বায়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেলের সদস্যসচিব মো. শাহজাহানও বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল সফর করে এসেছেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়সহ সিনিয়র নেতারাও বিভাগীয় পর্যায়ে সফর করছেন। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দিন-রাত কাজ করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল। নয়াপল্টন কার্যালয়েও দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সারা দেশ থেকে আসা অভিযোগ নিয়ে মনিটর করছেন। গুলশান কার্যালয়ে গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আবদুল আওয়াল খান, শহিদুল ইসলাম বাবুল, জিয়াউল হায়দার পলাশ, খান রবিউল ইসলাম, এস কে সাদী, জাকির হোসেন বাবু, শাহাদাত হোসেন, জাহিদ হোসেন সারা দেশ থেকে আসা নানা অভিযোগ নিয়ে কাজ করছেন। কোনো কোনো সমস্যার তাত্ক্ষণিক সমাধান দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনকেও বিএনপির পক্ষ থেকে নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে।

আরও তিনজন বহিষ্কার : দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী তত্পরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে রাজশাহী জেলার নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সিদ্দিকী ও হবিগঞ্জ পৌর যুবদল সভাপতি হাজী আবদুল মজিদকে বিএনপির সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা বিএনপির পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী।

সর্বশেষ খবর