সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ডিবি খুঁজছে এবার বোমা শাকিলকে

সাখাওয়াত কাওসার

বোমা মিজানের পর এবার বোমা শাকিল। জামা’আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) সামরিক বিভাগের এই সদস্য একেক সময় একেক এলাকায় মোস্তাফিজুর রহমান, মোস্তাক এবং নজরুল নামে পরিচিত। গত চার বছর ধরে এই বোমা শাকিলের নেতৃত্বেই চলছিল জেএমবির বোমা তৈরির কাজ। বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা পাস শাকিলের তৈরি করা হ্যান্ড গ্রেনেড, বোমা এবং ককটেলের মাধ্যমেই থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে ধ্বংসাত্মক হামলার পরিকল্পনা ছিল জেএমবির। টার্গেট স্থাপনাগুলোতে সুনিপুণভাবে হামলা সম্পন্ন করতে জঙ্গিরা ইতিমধ্যে একাধিকবার রেকির কাজও সম্পন্ন করেছিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতারকৃত তিন জেএমবি সদস্যের কাছ থেকে এমনই তথ্য আদায় করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তবে আস্তানা থেকে হ্যান্ড গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও সুকৌশলে পালিয়েছে শাকিল। ভয়ঙ্কর এই জঙ্গিকে ধরতে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে গোয়েন্দারা। সূত্র জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিরা একটি বাসাতে সর্বোচ্চ ছয় মাস অবস্থান করে। গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতেই এই কৌশল ছিল তাদের। এর বাইরে তারা সাধারণত এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা অপেক্ষাকৃত নজরদারি কম এমন এলাকা বেছে নেয়। মিরপুরের ওই বাড়িটিও ছিল আবুল হোসেন ভূইয়া নামে আওয়ামী লীগ নেতার। গত তিন মাস ধরে ছাত্র পরিচয়ে ওই বাসাটি নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল জঙ্গি প্রশিক্ষণ। সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিল ‘আ’ অদ্যাক্ষরের এক ব্যক্তি। ২০০৯ সালের ১৪ মে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার পরীবাগ এলাকা থেকে জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান মিজান ওরফে বোমারু মিজান ও তার স্ত্রী লতাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় বাসার ভিতরে থাকা মিজানের স্ত্রী লতা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে। বাসার ভিতরেও বিস্ফোরণ ঘটায় লতা। গ্রেনেড বিস্ফোরণে তার দুটি শিশু সন্তানও আহত হয়। ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা তৈরির সরঞ্জাম,  ডেটনেটর, গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম, বইপত্র, বোমা তৈরির ক্যাটালগ ও রাসায়নিক দ্রব্য। পূর্ব মনিপুরের ওই ৫ তলা বাড়িটিও মিজান গ্রেফতারের প্রায় ৬ মাস আগে ভাড়া নিয়ে রীতিমতো ল্যাবরেটরি হিসেবে গড়ে তুলেছিল। তবে বাড়ির মালিক আবদুল করিম এবং প্রতিবেশীরা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্রাবস্থায়ই বোমা শাকিল জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। পরবর্তীতে গত তিন বছর ধরে সে জেএমবির সামরিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠে। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। পরবর্তীতে বোমা মিজান গ্রেফতারের পর ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কারণে তাকে বোমা তৈরিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মৌলিক প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল আফজাল নামের এক শীর্ষ জঙ্গি। ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, বগুড়ার এই জঙ্গি অনেক ক্ষেত্রে বোমা মিজানকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাকে গ্রেফতারের পরই হয়তো আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। শাকিলসহ আরও কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের ৯ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়ি বোমা-গ্রেনেড তৈরি ও জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহূত হতো। গত চার মাসে ওই আস্তানায় এক ডজন জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের একটি মাজারে বোমা হামলার পর গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা জানিয়েছিল, মিরপুরের একটি ছয়তলা বাসায় তাদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের বর্ণনার সেই বাড়িটিই গত বৃহস্পতিবার ডিবির অভিযানের ছয়তলা বাড়ি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর