সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রয়োজনে সব বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রয়োজনে সব বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহালসহ অন্যান্য দাবি চলতি মাসের মধ্যে মেনে নেওয়া না হলে একযোগে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার মতো কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন শিক্ষকরা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  শিক্ষক নেতারা এই হুমকি দেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ, মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক নিলীমা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক ফরিদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিলাম। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নিজেদের মর্যাদার প্রশ্নে এখান থেকে ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি থেকে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। এই মাসের মধ্যে দাবি না মানলে ২ জানুয়ারি ফেডারেশনের সভা থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেটা কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কঠোর কর্মসূচিও হতে পারে। লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বিগত প্রায় আটমাস অব্যাহতভাবে আমরা অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবনমনের প্রতিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আন্দোলন করে আসছি। আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য যখন যে পদক্ষেপ অবলম্বনের প্রয়োজন ছিল আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রেখে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এ জন্য আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে স্বল্পতর পরিসরে কর্মবিরতি, মানববন্ধন ও স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করে সব মহলের যেমন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, তেমনি আমাদের দাবি-দাওয়ার ন্যায্যতাও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।তিনি জানান, আন্দোলনের ফলেই বেতন-বৈষম্য দূরীকরণ-সংক্রান্ত ৭ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিকবার আলোচনা করে অবনমনের প্রতিকার ও মর্যাদা রক্ষার দাবিসমূহের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি। সর্বশেষ গত ৬ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা সম্পন্ন করেছি। অর্থমন্ত্রী আমাদের যেসব সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলো হচ্ছে : অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে। এ ক্ষেত্রে সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় আদৌ না কমানো, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সিনিয়র সচিবের যে স্থান রাখা হয়েছে, সেই স্থানে গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান রাখা ও অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলেও অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করা। এ তিনটি প্রতিশ্রুতির মধ্যে কেবল তৃতীয়টি বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে। প্রকাশিত গেজেটে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল রাখা হয়নি এবং গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে সিনিয়র সচিবের সমমর্যাদায় স্থান দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আট মাসব্যাপী এই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন আজ ধৈর্যচ্যুতির শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এরূপ বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চলমান স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে; অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক তৈরি করা বিতর্কিত পরিপত্রটি তাত্ক্ষণিকভাবে বাতিল করার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের পরিপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়গণকে আমাদের প্রেরিত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে বিনীত অনুরোধ করছি; চলতি মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অর্থমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি; জাতির জনকের সৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এ কোনো অশুভ হস্তক্ষেপ না করার অনুরোধ করছি।

সর্বশেষ খবর