বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

যুদ্ধাপরাধীদের কার কত সম্পদ

জুলকার নাইন ও জিন্নাতুন নূর

যুদ্ধাপরাধীদের কার কত সম্পদ

যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্তরা বিভিন্ন সময়ে ছিলেন সরকারের মন্ত্রী ও এমপি। ক্ষমতার সুযোগে তারা গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসার মালিকানা নিয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে মাত্র আট যুদ্ধাপরাধীরই। ২০১০ সালের বিভিন্ন সময়ে কারাগারে যাওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে যেসব সম্পদের কথা বলা হয়েছে সেটাই হাজার কোটি টাকার সমান। তবে এ হিসাব শুধু তাদের নিজেদের নামে ঘোষিত সম্পদের। বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে থাকা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডিত ও দণ্ড কার্যকর হওয়া আটজনের সর্বশেষ রিটার্ন ঘোষণা থেকে বিস্তর সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। জানা যায়, সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের বিচারের পাশাপাশি দোষীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি উত্থাপিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবার ও সচেতন পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘রায় কার্যকরের পর যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে, যাতে এসব সম্পত্তি দেশবিরোধী কোনো কাজে ব্যবহূত হতে না পারে।’ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করে যুদ্ধাপরাধীদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে।’

মীর কাসেম আলী : যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী। বেশকিছু আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক মীর কাসেমের সম্পদ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু সে তুলনায় তার ব্যক্তি নামে সম্পদ কম দেখানো হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানের বেশির ভাগ সম্পদই বিভিন্ন কোম্পানি, ট্রাস্ট ও বেসরকারি সংস্থার নামে রয়েছে। ঢাকা কর অঞ্চল-৫-এর সার্কেল ৫০-এর করদাতা মীর কাসেম আলীর কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন নম্বর হলো ০৭৬-১০৩-৯৬৬৩। তিনি ঢাকার মিরপুরের দক্ষিণ মনিপুরে ২৮৭ নম্বর প্লটের বহুতল ভবন পেয়েছেন পৈতৃকসূত্রে। এ ছাড়া তার ব্যক্তি নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একতা সোসাইটির ৫ কাঠা জমি ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালায় সাড়ে ১২ শতক জমি রয়েছে। তিনি ধানমন্ডির বহুতল ভবন কেয়ারী প্লাজার অবিক্রীত ১৭৮.৬৯ বর্গমিটারের মালিক। বাকি অংশ ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মোট ২৭ হাজার ২৭৭টি শেয়ার রয়েছে তার নিজ নামে। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০০টি এবং দুই ছেলে-তিন মেয়ের নামে রয়েছে ৫০০টি। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ১১৩টি শেয়ার, কেয়ারী লিমিটেডের ১৪ হাজার শেয়ার, কেয়ারী টেলিকমের ১০ হাজার, কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেসের ১ হাজার শেয়ার, কেয়ারী ঝর্না লিমিটেডের ২০টি, কেয়ারী তাজ লিমিটেডের ৫টি, কেয়ারী সান লিমিটেডের ৫টি, কেয়ারী স্প্রিং লিমিটেডের ২০টি, সেভেল স্কাই লিমিটেডের ১০০, মীর আলী লিমিটেডের ২৫টি এবং দিগন্ত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের ১০০টি শেয়ার রয়েছে মীর কাসেম আলীর নামে। তিনি কেয়ারী লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য (প্রশাসন), ইবনে সিনা হাসপাতালের পরিচালক, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পরিচালক, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্টের সদস্য ও ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সদস্য। তিনি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রাবেতা আল আলম আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট, ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশন এবং অ্যাসোসিয়েশন অব মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার এজেন্সিসের বিভিন্ন বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিতির জন্য নিয়মিত ভাতা পেতেন। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদে আছেন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসমেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, আল্লামা ইকবাল সংসদ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর স্ট্রাটেজি অ্যান্ড পিস, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক ট্রাস্ট ও ইসলামিক ইকোনমিক্স রিসার্চ সেন্টারের। মীর কাসেম আলীর ২০১০ সালের আয়কর রিটার্নে ব্যক্তিগত ঘোষিত মোট পরিসম্পদ ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩২৪ টাকা। এর মধ্যে তার নামে থাকা শেয়ারগুলোর মূল্য ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ঢাকার বাড়ি ও জমির দাম মাত্র কয়েক লাখ টাকা করে উল্লেখ করা হয়েছে রিটার্নে। সে সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৫২৯ এবং ব্যাংকে ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭০১ টাকা। তবে মীর কাসেম আলী-সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের অঙ্কগুলোও বড় (কোনোটিই খেলাপি নয়)। কেয়ারী লিমিটেডের নামে ঋণ ৬০ কোটি ৯৩ লাখ, ইবনে সিনা ট্রাস্টের নামে ৫০ কোটি, ইবনে সিনা হাসপাতালের ৬ কোটি ৩৪ লাখ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০ কোটি, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের নামে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়ালের ২৩ কোটি ৭৫ লাখ এবং ফুয়াদ আল খতিবের নামে ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী : ফাঁসি কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বৃহৎ কর ইউনিটের করদাতা। তার কর শনাক্তকরণ নম্বর ছিল ৩০৫-১০০-১৭০১। তার মালিকানায় ছিল কিউসি কনটেইনার লাইন লিমিটেডের ৭ লাখ ১৮ হাজার শেয়ার (মূল্য ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা), ঢাকা ডাইং এমএফজি কো. লিমিটেডের ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৬টি শেয়ার (মূল্য ৮৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬০ টাকা), কিউসি ফিডারস লিমিটেডের ২৫ হাজার শেয়ার (মূল্য ২৫ লাখ টাকা), কিউসি প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ৩০০ শেয়ার (মূল্য ৩০ হাজার টাকা), কিউসি স্টেট লিমিটেডের ২৫০টি শেয়ার (মূল্য ২৫ হাজার টাকা), কিউসি হোল্ডিং লিমিটেডের ৩০ হাজার শেয়ার (মূল্য ৩০ লাখ টাকা), কিউসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ৫ হাজার ২৫০টি শেয়ার (মূল্য ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা), কিউসি ট্রেডিং লিমিটেডের ৫ হাজার ২৫০টি শেয়ার (মূল্য ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা), কিউসি শিপিং লিমিটেডের ৫ হাজার ২৫০টি শেয়ার (মূল্য ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা), বারউইন কিউসি এজেন্সিস লিমিটেডের ২ হাজার ৬৮টি শেয়ার (মূল্য ২০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা), কিউসি স্টেট লিমিটেডের শেয়ার মানি ডিপোজিট ৩০ লাখ টাকা, কিউসি নেভিগেশন লিমিটেডের শেয়ার মানি ডিপোজিট ১০ লাখ টাকা, ফোকাস মাল্টিমিডিয়া লি. ও সিএসবি লিমিটেডের ৯৫ হাজার শেয়ার (মূল্য ৮০ লাখ টাকা)। তার মালিকানায় ছিল মোট ১০ কোটি ৩২ লাখ ১৩ হাজার ৫০৪ টাকার শেয়ার। সাকা চৌধুরী কিউসি হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান এবং কিউসি নেভিগেশন ও মার্কারী এয়ার বিডির পরিচালক ছিলেন। আয়কর রিটার্ন অনুসারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামে ঢাকার ধানমন্ডির ১০/এ রোডের ২৮ নম্বর বাড়ি, চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের গুডসহিল ও রাউজানের গহিরায় তিনটি বাড়ির মালিকানা ছিল। কৃষিজমি ছিল চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরায় মাত্র ৯ হাজার টাকার। এইচএসবিসি, এবি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি অ্যাকাউন্টে জমা ছিল মাত্র ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯০৯ টাকা। সুদ ও জামানতমুক্ত ঋণ ছিল ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার। দুটি গাড়ির একটির মূল্য ৫৪ লাখ ১৫ হাজার ও অন্যটির ১২ লাখ টাকা। ঋণ দিয়েছিলেন ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সম্মানী ভাতা পেতেন বার্ষিক ১৭ লাখ টাকা। তার ঘোষিত মোট পরিসম্পদ মাত্র ৬৩ লাখ। তার নিজের ও স্ত্রীর মালিকানায় সোনার পরিমাণ ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র ছিল ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকার। অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৬৩ লাখ টাকার।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী : ঢাকা কর অঞ্চল-৫-এর করদাতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কর শনাক্তকরণ নম্বর ১৫৪-১০০-০৩৮৮। সাঈদীর ঢাকা, গাজীপুর, খুলনা ও পিরোজপুরে বাড়ি আছে চারটি। আছে পূর্বাচলে প্লট, শান্তিনগরে ফ্ল্যাট ও বাংলাবাজারে দোকান। রাজধানীর শাহজাহানপুরের শহীদবাগে ৯১৪ নম্বর বাড়িটি সাঈদীর। এ ছাড়া খুলনায় একটি বাড়ি এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে বাড়ি আছে। পিরোজপুরে পৈতৃক বাড়ি ও কৃষিজমি আছে। এ ছাড়া রাজউক পূর্বাচলে ৭ কাঠার প্লট পেয়েছেন সরকারের কাছ থেকে এবং শান্তিনগরের ফ্ল্যাট তিনি নিজে কিনেছেন। বাংলাবাজারের ৬৬ প্যারিদাস রোডে সাঈদীর বইয়ের দোকান আছে। নিজস্ব যানবাহনের মধ্যে সাঈদীর আছে একটি ২৭০০ সিসির পাজেরো জিপ (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৯৫৫)। স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে আছে ৩৫ ভরি সোনা। আছে ২ লাখ টাকা মূল্যের একটি পিস্তল। শেয়ারের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ১টি ও বারাকাহ হাসপাতালের ১টি শেয়ার। সাঈদীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইসলামী ব্যাংকের মৌচাক শাখায় আছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৫১৯ টাকা ও লোকাল অফিসে আছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৪৮ টাকা। ইসলামী ব্যাংকের খুলনা শাখায় ৫ লাখ ৯১ হাজার টাকার ঋণ আছে। রিটার্নে ঘোষণা অনুযায়ী ২০০৯-২০০৮-এর হিসাবে মোট সম্পদ ৮২ লাখ ৯২ হাজার ১৪৮ টাকা। এর মধ্যে শহীদবাগের বাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৬ লাখ ৭৭ হাজার, খুলনার বাড়ি ৮ লাখ ৫০ হাজার, টঙ্গীর বাড়ি মাত্র ৬ লাখ আর ফ্ল্যাট ১০ লাখ টাকা। সাঈদীর নগদ টাকা ১৭ লাখ ৬২ হাজার এবং ব্যাংকে তার জমা টাকার পরিমাণ ১১ লাখ ৮৬ হাজার। সাঈদীর ঘোষিত আয় ছিল ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ টাকা। এগুলো আসত বাড়িভাড়া, শিক্ষকভাতা, বইয়ের রয়ালটি থেকে। তার স্ত্রী সালেহা সাঈদী আলাদা করদাতা। তার নামেও রয়েছে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও নগদ এবং ব্যাংক জমা। সাঈদী তার টিভি, ফ্রিজ, এসিসহ অন্যান্য আসবাবপত্রের সবই দান হিসেবে পেয়েছেন তাই দাম জানেন না বলে কর রিটার্নে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তার স্ত্রীর নামে ১ লাখ ৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র আছে বলে রিটার্নে উল্লেখ আছে।

মতিউর রহমান নিজামী : ঢাকা কর অঞ্চল-১-এর সার্কেল-৫-এর করদাতা মতিউর রহমান নিজামীর করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর ২৮৩-১০৮-৪৪৫১। তার ঢাকার বনানীর ১৮ নম্বর রোডে প্লট-৬০-এ ৫ কাঠা ১৫ ছটাক ১৩০ বর্গফুটের ওপর বাড়ি রয়েছে। দাম উল্লেখ করেছেন মাত্র ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮৫ টাকা। মগবাজারের বাড়ি স্ত্রীর নামে। এ ছাড়া পাবনার সাঁথিয়ায় ১৬ শতকের ওপর রয়েছে সেমিপাকা বাড়ি। ঝিনাইদহে ৫৬ শতক অকৃষিজমির দাম বলেছেন ৩৮ হাজার ২৮৩ টাকা। গাড়ি আছে ৩টি। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রো-ঘ-০২২৯২৩ নম্বরের একটি পাজেরো ও ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৬৭২ নম্বরের অন্য একটি প্রাইভেট কার। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রো-চ-৯৪৯৫ স্টেশন ওয়াগন গাড়িটি বর্তমানে পাবনা জামায়াত ব্যবহার করে। নিজামীর মালিকানায় আছে ইসলামী ব্যাংকের ৪৪টি শেয়ার (মূল্য ৪৪ হাজার টাকা), তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের ৪৪টি শেয়ার (মূল্য ৪৪ হাজার টাকা) এবং নিজামীর নিজ নামে বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ৫ হাজার ১০০ শেয়ার (মূল্য ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা)। সর্বশেষ ২০০৯ সালের আয়কর রিটার্নে তার ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৩ লাখ ৩ হাজার ১২৭ টাকা। তার স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী আলাদা করদাতা (টিআইএন নম্বর- ০৭৫-১০৩-৫২২০)। তার নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৮৯.১৫ শতক জমি এবং ঢাকায় ১৪.৭৫ শতকের ওপর টিনশেড দালানবাড়ি। নিজামীর স্ত্রীর নামে ৫০ ভরি সোনা আছে, যার মূল্য বলেছেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্রের দাম মাত্র ৫০ হাজার টাকা। তার গাড়ির সব খরচ বহন করত জামায়াতে ইসলামী। বার্ষিক বিভিন্নভাবে ব্যক্তিগত খরচ ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তবে সন্তানদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সব বিল ও ব্যয় বহন করেন স্ত্রী শামসুন্নাহার।

আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ : ফাঁসি কার্যকর হওয়া আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ঢাকা কর অঞ্চল-৪-এর বৈতনিক সার্কেল-৭-এর করদাতা ছিলেন এবং তার কর শনাক্তকরণ নম্বর ছিল ২৮৩-১১২-৮৬৯৬। তার সম্পদের মধ্যে ছিল উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডে রাজউকের ৫ কাঠা জমির প্লট-২/১-এর বহুতল বাড়ি এবং ফরিদপুর পৌরসভার পশ্চিম খালাসপুরে ৫.১১ শতকের ওপর বিল্ডিং। তার ছিল স্পেনের তৈরি ২২ বোরের একটি পিস্তল। এ ছাড়া মুজাহিদের নামে ছিল ইসলামী ব্যাংকের ২টি শেয়ার, বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ৫ হাজার ৭৫টি শেয়ার। তার নিজের কোনো গাড়ি ছিল না বলে আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেছিলেন। বলেছিলেন জামায়াতের দেওয়া গাড়ি ব্যবহার করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে আয়কর রিটার্নের ঘোষণা অনুসারে নিজ ও স্ত্রী-পুত্রের নামে ব্যাংকে জমা ছিল ১ লাখ ৫১ হাজার ৯২৭ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার, ইলেকট্রনিক ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার, আসবাবপত্র ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার এবং নগদ ছিল ৮৪ হাজার টাকা। তার বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তিনি প্রতি বছর জামায়াত থেকে পেতেন ৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান থাকা মুজাহিদের রিটার্নে ঘোষিত পরিসম্পদ ছিল মাত্র ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৫২৭ টাকা। তার স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান করদাতা নন।

আবদুস সুবহান মিয়া : আবুল বশর মোহাম্মদ আবদুস সুবহান মিয়া রাজশাহী কর অঞ্চলের পাবনা সার্কেল-১-এর করদাতা। তার করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর ৪৬১-১০৮-৬৫৪২। সুবহান মিয়ার পাবনার গোপালপুরে একটি বহুতল ভবন (আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখ টাকা) রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ মাসিমপুরে রয়েছে সেমিপাকা বাড়ি (আনুমানিক মূল্য ২০ লাখ টাকা)। গোপালপুরের লক্ষ্মীনাথপুরের দক্ষিণ মাসিমপুরে রয়েছে তার মালিকানাধীন ২৫ বিঘা জমি (আনুমানিক মূল্য ১ কোটি টাকা)। কৃষিজমি আছে ৪.৬০ একর এবং যৌথ মালিকানায় আছে ৩.৮৩ একর। তার মোট কোম্পানি শেয়ার ৫ হাজার ১২৭টি (প্রাথমিক মূল্য ৫ লাখ ৩৭ টাকা)। তার পাজেরো জিপের (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৪৪৫) মূল্য আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা। সুবহান মিয়ার মালিকানায় থাকা ২৫ ভরি সোনার দাম ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। রিটার্ন ঘোষণায় তার ব্যাংকে জমা টাকা দেখানো আছে ১০ লাখ ৮৪ হাজার মাত্র।

এ টি এম আজহারুল ইসলাম : ঢাকা কর অঞ্চলের করদাতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের শনাক্তকরণ নম্বর ১৪৭-১০৫-৭৩৬৬। তার মালিকানায় আছে রংপুরের প্রফেসরপাড়ায় সীমানাবেষ্টিত একটি বাড়ি। বদরগঞ্জে ২৫ বিঘা জমি। রংপুরের কাটাসন গ্রামে রয়েছে পৈতৃক কৃষিজমি। তার মালিকানায় ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ৮৩টি শেয়ার এবং বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ৫ হাজার ২৫টি শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া ছেলের নামে রয়েছে ১০টি শেয়ার। আজহার ও তার স্ত্রীর রয়েছে ১০ ভরি সোনা। জামায়াত থেকে প্রতি বছর পেতেন ৫ লাখ টাকা। ২০১০ সালের রিটার্ন ঘোষণা অনুসারে আজহারের নিজ নামে জমা আছে ১ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে আছে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা। তার আসবাবপত্র মাত্র ৩০ হাজার টাকার এবং তার কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী নেই।

কামারুজ্জামান : ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর অবৈতনিক সার্কেল-৪-এর করদাতা ছিলেন মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। তার কর শনাক্তকরণ নম্বর ছিল ০৩৯-১০২-৫৩৩৫। তার নিজের নামে ঢাকার মিরপুরের সাংবাদিক কলোনির সেকশন-১১-এর ব্লক-১-এর ৪ নম্বর রোডে ১০৫ নম্বর বাড়ি ছিল ৩ কাঠার ওপর। এটি দুই ইউনিটের ছয় তলা বাড়ি। এর মূল্য বলেছিলেন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া শেরপুর শহরের মুদিপাড়ায় ১১ শতকের ওপর পাকা বাড়ি ছিল কামারুজ্জামামের নামে। দাম বলেছিলেন ২ লাখ ৬০ হাজার। এ ছাড়া শেরপুরের কুমারীতে ১ একর ৩০ শতাংশ এবং পুরান বাজারে ১ একর ৪৬ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন কামারুজ্জামান। তার নামে ইসলামী ব্যাংকের ৫৩টি শেয়ার এবং অনামিকা করপোরেশনে ৫ হাজার ৩৫০টি শেয়ার ছিল। তার নামে ঢাকা মেট্রো-ট-১১-৪২৩০ নম্বরের একটি মাইক্রোবাস ও ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৮৬৩৮-এর একটি ২৩৬০ সিসির পাজেরো গাড়ি আছে। সোনার সবই পেয়েছিলেন উপহারস্বরূপ। তাই ভরি জানতেন না, তবে আনুমানিক মূল্য বলেছিলেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ও আসবাবপত্র মাত্র ৬০ হাজার টাকার। ২০০৯ সালের রিটার্নে উল্লিখিত মোট সম্পদ ছিল মাত্র ৮২ লাখ ৭৬ হাজার ৭২৯ টাকা। তিনি অনামিকা করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে লোন নিয়েছিলেন ২ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংকের মৌচাক শাখা থেকে নিয়েছিলেন ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৯৭৮ টাকা, নিজ অফিস থেকে নিয়েছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ব্যক্তিগত বিভিন্ন খাত থেকে ২ লাখ টাকা। ২০০৯ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সে বছর আয়কর দেন ১ লাখ ২ হাজার ৮৮৬ টাকা। এর আগের বছর ২০০৮-এ আয়কর দেন ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

সর্বশেষ খবর