বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্নীতিতে আগের অবস্থানই

প্রতিরোধে অগ্রগতি হয়নি, বললেন অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতিতে আগের অবস্থানই

২০১৪ সালের তুলনায় বিদায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি। দুর্নীতির এই ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক। বৈশ্বিক সূচকে ২০১৪ সালের মতো ২০১৫ সালেও একই অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এবার এই সূচকে দুর্নীতির নিম্নমুখী প্রবণতায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮ দেশের মধ্যে ১৩৯তম। এর আগের বছর ১৭৫ দেশের মধ্যে ছিল ১৪৫তম। আর দুর্নীতির উচ্চমুখী প্রবণতায় বাংলাদেশের এবারের অবস্থান ১৩তম। এবার বাংলাদেশের এই সূচকে স্কোর ২০১৪ সালের মতোই ২৫। গতকাল বিশ্বব্যাপী বার্লিন থেকে প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক দুর্নীতি ধারণা সূচক-২০১৫ প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকার মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন টিআই বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

এবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়েছে ভুটানে। দেশটির এবারের স্কোর ৬৫। এ অঞ্চলের একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া সব দেশেই বাংলাদেশের তুলনায় কম দুর্নীতি হয়েছে। এবার ভারতের স্কোর ৩৮, শ্রীলঙ্কা ৩৭, পাকিস্তান ৩০ এবং নেপাল ২৭। সে হিসাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দুর্নীতির এই চিত্রে টিআইবি সন্তুষ্ট নয় বলে জানান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম, আর ২০১৩ সালে ছিল ১৬তম এবং ২০১২ সালে ছিল ১৩তম স্থানে। সূচকের ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ২৫। সূচকে ৪৩ স্কোরকে বৈশ্বিক গড় স্কোর বিবেচনা করা হলেও বাংলাদেশের ২৫ স্কোর দুর্নীতির ব্যাপকতা উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়। ২০১৪ এর তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ছয়ধাপ এগিয়েছে, আর নিম্নক্রম অনুযায়ী একধাপ পিছিয়েছে। অর্থাত্ সার্বিক বিবেচনায় এবারও দুর্নীতি হ্রাসে বাংলাদেশের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কিছু দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ সত্ত্বেও তার প্রয়োগ ও চর্চার ঘাটতির ফলে আমাদের অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়াও সরকারের নীতি কাঠামো দুর্নীতি সহায়ক। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পরে শুধু আফগানিস্তান অবস্থান করছে। এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরও কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) জবাবদিহিমূলক অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও কার্যকরতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। দুর্নীতির বৈশ্বিক সূচক অনুযায়ী ৯১ স্কোর পেয়ে ২০১৫ সালে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক। ৯০ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড এবং ৮৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুইডেন। আর সর্বনিম্ন ৮ স্কোর  পেয়ে ২০১৫ সালে তালিকার সর্বনিম্নে যৌথভাবে অবস্থান করছে উত্তর কোরিয়া ও সোমালিয়া। আর ১১ ও ১২ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনিম্ন দ্বিতীয় ও তৃতীয় দেশ হিসেবে রয়েছে যথাক্রমে আফগানিস্তান ও সুদান। এর পরই ১৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুদকের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতা খর্ব করার অপপ্রয়াস যেমন অব্যাহত রয়েছে, তেমনি দুদকের নিজস্ব সক্রিয়তা, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়াও সরকারের নীতি কাঠামো দুর্নীতি সহায়ক, দুর্নীতিতে লাভবান ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয়দানকারী মহলের করাভূত হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, যদি সংসদীয় কমিটিগুলো কার্যকর হয়, প্রশাসনযন্ত্র সংসদের জবাবদিহিতার মধ্যে থাকে, বিরোধী দল কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে আমাদের অবস্থার আরও উন্নতি হতে পারে। সংসদ একেবারেই অকার্যকর নয়। যতটা কার্যকর আছে তাকে আরও কার্যকর করতে হবে।

সর্বশেষ খবর