বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী

চাপ যতই আসুক অন্যায়ে প্রশ্রয় নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। সে যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন। কেউ অন্যায় করতে চাইলে, পুলিশকে ব্যবহার করে অপকর্ম করতে চাইলে প্রশ্রয় দেবেন না। সে প্রভাবশালী আমার দলের (আওয়ামী লীগের) নেতা হলেও সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সে ব্যবস্থা রেখেছি। নির্যাতিত মানুষের পক্ষে থাকবেন, জনকল্যাণে কাজ করবেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ নির্দেশনা দেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড স্বাচ্ছন্দ্যে পরিচালনায় কয়েকজন সচিব নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ বর্তমানে এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণ, জনগণের মঙ্গলই আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। আর এ জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে হবে। সে দায়িত্ব সার্বিকভাবে পুলিশের ওপরই পড়ে। শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামগঞ্জে কিছু দুর্বল লোকের ওপর প্রভাবশালীরা নানাভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে অত্যাচার করে। এদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, সমাজের উচ্চমহল থেকে নিচের মহল পর্যন্ত মাদকের প্রভাবে বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের যুবসমাজের অনেকে বিপথে চলে যাচ্ছে এবং তাদের জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। আরও বেশি কঠোর হতে হবে। এদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

পুলিশ বাহিনীকে মানুষের আস্থা অর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভিতরে আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করুন। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন। সবার বেতন-ভাতা আমরা বাড়িয়েছি। পুলিশ বাহিনীর সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পুলিশ যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেজন্য তাদের সে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার। সরকার সেসব ব্যবস্থা করেছে। কোথায় কী করতে হবে, তা আমরা জানি। তাই আমার সরকারের কাছে কোনো দাবি করতে হয় না। দাবি ওঠার আগেই তা পূরণ করি। পুলিশের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছি। ঝুঁকি ভাতার প্রচলন করেছি। কল্যাণ ফান্ড গঠন করেছি। রেশন বাড়িয়েছি। নতুন নতুন থানা ও ব্যারাক নির্মাণ করেছি। রাজারবাগে ১০ তলা বিল্ডিং করেছি। পুলিশের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন সংগ্রহ করেছি। আমাদের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ পুলিশ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজ্জাম্মেল হক খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেছুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ইকবাল বাহার, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার আমেনা বেগম। কর্মকর্তারা পুলিশের পৃথক ডিভিশন, ব্যাংক স্থাপন, থানার আয়তন ও আবাসন ব্যবস্থা বৃদ্ধি, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিমানবন্দরগুলোর দৃশ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সমন্বয়ে ‘কম্পোজিট ফোর্স’ গঠন করা হবে। আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতি দ্রুত এবং দৃশ্যমানও করতে হবে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে। এ জন্য কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন করে বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজরি কমিটির’ সক্রিয়তার বিষয় উল্লেখ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের হরতাল-অবরোধের নামে নৃশংসতা মোকাবিলা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থিদের দমনে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বোমা হামলা মামলার তদন্তেও পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন আপনারা।

সর্বশেষ খবর