সোমবার, ৭ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
এশিয়া কাপ

এবারও পারল না টাইগাররা

চ্যাম্পিয়ন ভারত রানার্সআপ বাংলাদেশ

আসিফ ইকবাল

এবারও পারল না টাইগাররা

এশিয়া কাপে এবারও শিরোপা জিততে পারল না টাইগাররা। চার বছর আগের দুঃস্বপ্নটা ফিরে এলো চিরচেনা মিরপুরে। ফের স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণায় নীল হলো ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২০১২ সাল থেকে ২০১৬— চার বছর বয়ে বেড়ানো দুঃখটা ভুলে যাওয়ার, মুছে ফেলার যে পথ তৈরি হয়েছিল, তা আর হলো না। ভারতের কাছে ৮ উইকেটে একপেশে হারের কষ্টে, স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় কাঁদল বাংলাদেশ। কাঁদলেন মাশরাফিসহ ১৬ কোটি বাঙালি। বাংলাদেশের স্বপ্ন ভঙ্গের কফিনে পেরেক ঠুকে দেন শেখর  ধাওয়ান, বিরাট কোহলি ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। জয়সূচক ওভার বাউন্ডারিটি আসতেই কোহলি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন, তাতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় বিশ্বের এক নম্বর দলটি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

৫৬ হাজার বর্গমাইলের ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমী অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন মিরপুর স্টেডিয়ামের দিকে। তীর্থের কাক হয়ে বসেছিলেন টি-২০ এশিয়া কাপের স্বপ্নের ফাইনাল উপভোগ করতে। ইতিহাস গড়ার স্বপ্নে বিভোর বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমী প্রতিবেশী ভারতের বিপক্ষে প্রিয় ক্রিকেট দল এবং ক্রিকেটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন জোগাতে তাল মেলান একে অপরের সঙ্গে। ক্রিকেটারদের উদ্দীপ্ত করতে, আত্মবিশ্বাস জোগাতে দেশ-বিদেশের ক্রিকেটপাগল বাঙালি বদলে ফেলেন নিজ নিজ প্রোফাইল পিকচার। বদলে ফেলা প্রোফাইল পিকচারে শুধু ক্রিকেট আর ক্রিকেট। বাংলাদেশ-ভারত ফাইনালকে ঘিরে আবেগের জোয়ারে ভেসে গেছে গোটা দেশ। আবেগ, ভালোবাসা নিয়ে সবাই যখন বসে আছেন বল গড়ানোর, তখনই ঝড়ে স্তব্ধ হয়ে পড়েন সবাই। পাঁচ মিনিটের ঝড় এবং আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতে খণ্ডিত হয়ে পড়ে ম্যাচ। কাটা পড়ে দেড় ঘণ্টা। তাতে টি-২০ এশিয়া কাপের আবেগের ফাইনাল পরিণত ১৫ ওভারের ম্যাচে। কার্টেল ওভারে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারতের ব্যাটিং দেয়ালকে গতি দিয়ে ভেঙেচুরে দেওয়ার পরিকল্পনায় কাল ফের চার পেসার নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। কাটার বোলার মুস্তাফিজুর রহমান না থাকায় যে শক্তি হ্রাস পেয়েছে পেস অ্যাটাকে, সেটা পুষিয়ে দিতে প্রথমবারের মতো নেওয়া হয় আরেক বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দার রনিকে। বাদ দেওয়া হয় অফ ফর্মের ওপেনার মোহাম্মদ মিথুনকে। লেট মিডল অর্ডারকে শক্তিশালী করতে ফিরিয়ে আনা হয় নাসির হোসেনকে। নাসির গতকাল প্রথম খেলেছেন এবারের এশিয়া কাপে। টানটান উত্তেজনার পাকিস্তান ম্যাচে খেললেও কাল ফের সাজঘরে ঠাঁই হয় বাঁ-হাতি স্পিনার আরাফাত সানির। পরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাশরাফি বাহিনী কাল আবেগকে পুঁজি করে ময়দানী লড়াইয়ে নামে টি-২০ ক্রিকেটের শীর্ষ দল ভারতের বিপক্ষে।   

চার বছর আগে দুই রানে হেরেছিল ফাইনালে। সেই কষ্ট, আবেগ এখন তাড়িয়ে বেড়ায় টাইগারদের। ২০১২ সালের কষ্টকে অবশ্য ১১ টাইগার ছুড়ে ফেলেছিলেন পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে। চার বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। কাল প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল ২৭ রান যোগ করেন স্কোর কার্ডে। দারুণ খেলতে থাকা সৌম্য মিড অফে ক্যাচ দেন পান্ডেকে তুলে খেলতে গিয়ে। পরের ওভারে তামিম ফিরেন লেগ বিফোর হয়ে। ৫ ওভারের পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩০। সাব্বির হোসেন নামলেও আগের ধারাবাহিকতায় আগ্রাসন ধরে রাখতে পারেননি। চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১২ নম্বর ওভারের তৃতীয় বলে রানআউট হন মুশফিকুর রহিম। প্রথম মনে হচ্ছিল ক্রিজে ঢুকে পড়েছেন মুশফিক। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় মুশফিকের ব্যাট ক্রিজ পার হলেও শূন্যে ভাসছিল। তৃতীয় আম্পায়ার তাই রানআউট দিতে দেরি করেননি। মুশফিকের বিদায়ের পরই ক্রিজে আসেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। পাকিস্তান ম্যাচে মোহাম্মদ আমিরকে টানা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতানোর নায়ক মাশরাফি নেমেই ফিরে যান সাজঘরে। চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তখন মনে হচ্ছিল শয়ের কোটা পেরোবে না। কিন্তু বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দুই সেঞ্চুরি হাঁকানো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নেমেই পাল্টে ফেলেন ম্যাচের গতিধারা। পান্ডের করা ১৪ নম্বর ওভারে দুই ছক্কা এক চারে তুলে নেন ২১ রান। মাহমুদুল্লাহর আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই ১৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১২০। ওভারপ্রতি স্ট্রাইক রেট ৮।

টার্গেট ১২১ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম আঘাত হানেন আল-আমিন। স্লিপে সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন রোহিত শর্মা। রোহিতের ফেরায় উত্তেজনা মাঠে, লড়াইয়ের আভাস মেলে। কিন্তু শেখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলি ধীরে স্বস্তিতে ব্যাট চালিয়ে ভারতকে এশিয়া কাপের ষষ্ঠ শিরোপা উপহার দেন। ধাওয়ান ৬০ রানের ঝরঝরে ইনিংস খেলেন ৪৪ বলে। কোহলি অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে। ম্যাচজয়ী শটস খেলা ধোনির নামের পাশে লেখা ২০ রানের অপরাজিত ইনিংস। ভারতের উৎসব-উচ্ছ্বাসের দিনে টুর্নামেন্ট সেরা পুরস্কার বাংলাদেশের সাব্বির।

সর্বশেষ খবর