শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্নীতিপরায়ণদের সঙ্গে রাজনীতির যোগসাজশ আছে

------ ড. আনিসুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতিপরায়ণদের সঙ্গে রাজনীতির যোগসাজশ আছে। দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাই প্রধান অন্তরায়। এ ছাড়া মামলার দুর্বলতা, তদন্ত প্রতিবেদন মজবুত না থাকা, আইনগত ত্রুটিসহ নানা কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা আদালতে টিকছে না। এ কারণে দুদকের মামলার আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতিবাজদের সাজা নিশ্চিত করতে না পারলে দুদকের কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। দুদক এই সেমিনারের আয়োজন করে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন দুদকের কমিশনার ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, দুদকের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মো. জমির, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান ফারুক, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, কণ্ঠশিল্পী হায়দার হোসেন প্রমুখ। সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন টেলিভিশন উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিপরায়ণদের সঙ্গে রাজনীতির যোগসাজশ আছে। তারা সেখান থেকে প্রশ্রয় পাচ্ছে। দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির এ যোগসাজশ দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে বড় বাধা। দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাই প্রধান অন্তরায়। অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তিকে আরও গ্রহণযোগ্য করতে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে কিছু মৌলিক বিষয়ে এখনই বিশ্লেষণ করা উচিত। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক বলে উল্লেখ করেন তিনি। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে সবার কাছে এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে, দুর্নীতি করে পার পাওয়া যাবে না। এ জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। তাহলে দুর্নীতিবাজদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ দুর্নীতির রাজনৈতিকীকরণের কথা তুলে ধরেন বলেন, দুর্নীতি যেমন সরকারি দলে আছে, তেমনি আছে বিরোধী দলেও। দুর্নীতি কমাতে হলে ওপরের দিক থেকে কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন তিনি। দুদকের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, দুদকের স্বাধীনতার কথা শুধু মুখে বললে হবে না। স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে অন্যদের সহায়তা লাগবে। দুদক প্রতিবছর রাষ্ট্রপতির কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু সে প্রতিবেদন নিয়ে সংসদে কখনো আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেন জানি দুদক নিয়ে আলোচনা করতে তাদের অনীহা!’

সর্বশেষ খবর