মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

বগুড়ায় বিপুল গ্রেনেড অস্ত্র উদ্ধার

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহ র‌্যাবের, নিহত যুবকের স্বজনরা পুলিশ হেফাজতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় বিপুল গ্রেনেড অস্ত্র উদ্ধার

বিস্ফোরণ হওয়া বাড়ি ঘিরে রেখেছে র‌্যাব-পুলিশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বগুড়ার শেরপুরে একটি ভাড়াবাড়িতে গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে অজ্ঞাত দুই যুবক নিহত হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০টি গ্রেনেড, বোমা ও ককটেল তৈরির সরঞ্জাম, চারটি বিদেশি পিস্তল ও ছয়টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। রবিবার রাত ৯টার দিকে শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর কুটির ভিটা গ্রামের একটি একতলা বাড়িতে বিস্ফোরণে ওই দুই যুবক নিহত হয়। পরে ওই বাসা থেকে গতকাল বিস্ফোরকগুলো উদ্ধার করা হয়। এখনো নিহত দুই যুবকের পরিচয় মেলেনি। ঘটনার পর থেকে জেলা পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছেন। র‌্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর এ এফ এম আজমল হোসেন খান জানান, প্রাথমিকভাবে এটি কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। র‌্যাব সদস্যরাও কাজ শুরু করেছেন। নিহতদের পরিচয় পাওয়া গেলে রহস্য বেরিয়ে আসবে। জানা গেছে, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা এলাকার মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান শেরপুরের গাড়ীদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর কুঠির ভিটা এলাকায় ছয় বছর আগে দুটি পৃথক একতলা বাড়ি করেন। এর একটি তিনি মেয়ে সুমাইয়া পারভীনকে দেন। সুমাইয়া ওই বাড়িতে স্বামী নিয়ে বসবাস করেন। অন্য বাড়িটি তিনি নিজে রাখেন। কিন্তু মাহবুবুর রহমান ঢাকায় থাকেন। তার মালিকানাধীন বাড়িটি প্রায় ছয় মাস আগে নওগাঁর সিএনজিচালক মিজানুর রহমান ভাড়া নেন। তিন দিন আগে বাড়ির ভাড়াটিয়া পরিবার নিয়ে নিজ গ্রামে বেড়াতে চলে যান। এরপর ওই বাড়িতে সিএনজিচালক মিজানের আত্মীয় পরিচয়ে দুই ব্যক্তির আনাগোনা শুরু হয়। রবিবার রাত ৯টার সময় বিকট শব্দে বাড়িটি কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে প্রতিবেশীরা সেখানে ছুটে যান। বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে তারা এসে দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতর যান এবং দুজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন এবং রাত ১১টার দিকে অপর যুবক মারা যায়। দুই যুবকেরই বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। খবর পেয়ে শেরপুর থানা ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়িটি ঘিরে রাখেন। গতকাল সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল বগুড়ায় এসে ঘিরে রাখা বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। ঢাকা থেকে পুলিশের সহকারী কমিশনার রহমত উল্লাহর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিম তিন কক্ষের ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০টি গ্রেনেড, চারটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি ম্যাগাজিন, ৪০ রাউন্ড গুলি, বিপুল পরিমাণ ককটেল এবং অর্ধ শতাধিক বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এ সময় একটি বাজাজ মোটরসাইকেল এবং একটি বাইসাইকেল উদ্ধার করা হয়। বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, ঢাকা থেকে আসা বোমা বিশেষজ্ঞ দল গ্রেনেড, বিদেশি পিস্তল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। নিহত দুই যুবকের পরিচয় উদ্ধারে অভিযান চলছে। উদ্ধার গ্রেনেডগুলো বোমা বিশেষজ্ঞ দল ধ্বংস করেছে। এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা তত্পরতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

তরিকুলের স্বজনরা পুলিশ হেফাজতে : বোমা বিস্ফোরণে নিহত দুইজনের মধ্যে তরিকুল ইসলামকে শনাক্ত করার জন্য তার পরিবারের ছয় জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের জামুয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাদের আটক করে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তরিকুলের স্বজনরা হলো-বাবা মাও. আবুবক্কার সিদ্দিক (৭৮), ভাই ইসলামী ব্যাংক উল্লাপাড়া শাখার সিনিয়র অফিসার সানাউল্লাহ (৪৪), স্থানীয় জামুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিয়াকত আলী, কৃষক বরকত উল্লাহ, বোন শাকেরা খাতুন ও ভাই আহসান হাবিবের স্ত্রী মাহবুবা খাতুন। এদের সাথে আহসান হাবিবের ২ শিশু সন্তানও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর