মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

মসজিদের ভিতরে মুয়াজ্জিন খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার ইসলামপুরে একটি মসজিদের ভিতরে বেলাল হোসেন (৫০) নামে এক মুয়াজ্জিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি স্থানীয় ঝব্বু খানম জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। গত রবিবার রাতের যে কোনো সময় তাকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সকালে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ওই মসজিদে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন হিসেবে ওই মসজিদের ইমাম তাইজুল ইসলামসহ ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ধর্মীয় মতাদর্শের কারণে এ হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ইয়াছিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেন। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, মসজিদের পাশে খ্রিস্টানদের মিশনারিস অব চ্যারিটি। এর বিপরীতেই জিন্দা পীরের মাজার। ওই মুয়াজ্জিন মাজারে যাতায়াত করতেন। তবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি মসজিদে থাকতেন। প্রতি ওয়াক্তের নামাজে তিনি থাকতেন। বেলাল প্রায় ২৮ বছর ধরে ওই মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কখনো ঝগড়া-বিবাদে জড়াতেন না। ঝব্বু মসজিদ ভবনটি পাঁচতলা হলেও এর নিচতলা ও বেইজমেন্টে ৩০টি দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে মুয়াজ্জিন প্রতি মাসে ভাড়া তুলতেন। এ ছাড়া দানবাক্সের টাকাও তার কাছে থাকত।

মসজিদের যাবতীয় টাকা-পয়সা উত্তোলন ও হিসাব তিনিই রাখতেন। দ্বিতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত মসজিদ। পুরো মসজিদে রয়েছে এয়ারকন্ডিশন। ইসলামপুর রোড মূল সড়ক থেকে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় উঠার সিঁড়ি রয়েছে। একটি কলাপসিবল গেটও আছে। যা নামাজ পড়ার সময় ছাড়া অন্য সময় তালা দেওয়া থাকত। এর চাবি ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের কাছে থাকে। নিহত বেলালের ছোট ভাই আবুল বাশার বলেন, গত রমজান মাসে কয়েকজন দুর্বৃত্ত বেলালকে মুখ বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে ৬৫ হাজার টাকা লুট করে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে সাত দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে হত্যাচেষ্টাও করা হয়েছিল। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। কিন্তু কারা তাকে হামলা করেছিল তা এখনো জানা যায়নি। জিডি তদন্ত করে আজ পর্যন্ত পুলিশ জড়িতদের গ্রেফতারও করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, বেলালের স্ত্রীর নাম ইয়াসমিন আক্তার। ওই দম্পতির ইয়াসিন (২০) ও তাসলিমা (১৮) নামে দুই সন্তান রয়েছে। তাদের বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার নয়েরচর গ্রামে। ইয়াসিন হাফেজি শেষ করে ফরিদাবাদ কওমি মাদ্রাসায় পড়ছে। আর বেলালের স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকত। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে বেলাল বড় ছিলেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বেলালের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, সকালে ফজরের নামাজ পড়তে এসে ইমাম দেখেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার মাঝে সিঁড়ির ওপর বেলালের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। ধারালো ছুরি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করা হয়। তার রুম তালা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। রবিবার মধ্যরাতে রুমে ঢোকার আগেই তাকে খুন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি সিঁড়িতেই হয়েছে। কারণ ঘটনাস্থলে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। তৃতীয় তলার পূর্ব পাশের একটি কক্ষে একাই থাকতেন বেলাল আর পশ্চিম পাশের আরেকটি কক্ষে থাকতেন জুনিয়র মুয়াজ্জিন মোশারফ হোসেন। মোশারফ তার কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন।

ওসি আরও বলেন, ধর্মীয় মতাদর্শ বিরোধ থেকে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া পারিবারিক বা অন্য কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় ওই মসজিদের ইমামসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রজমান মাসে বেলালকে মারধরের পর থানায় করা জিডির বিষয়টি জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। ঝব্বু মসজিদ মার্কেটের ইনচার্জ আবদুল আওয়াল পাঠান বলেন, মার্কেট সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তিনি ওই মার্কেটের বেইজমেন্টের দোকানে রাতে ঘুমান। প্রতিদিন ভোর রাতে মুয়াজ্জিন বেলাল আজান দিলেও গতকাল ভোরে তিনি আজান শুনতে পাননি। পরে ঘুম থেকে উঠে লোকমুখে শুনেন, বেলালকে কে বা কারা হত্যা করেছে। মুসল্লিদের বরাত দিয়ে আওয়াল বলেন, ভোরে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় উঠার গেট খোলা ছিল। ইমামসহ কয়েকজন মুসল্লি দ্বিতীয় তলায় সুন্নত নামাজ আদায় করেন। মুয়াজ্জিনের আসতে দেরি দেখে ইমাম তৃতীয় তলায় তাকে ডাকতে গিয়ে সিঁড়িতে বেলালকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তার চিত্কারে মুসল্লিরা ছুটে গিয়ে দেখেন, বেলালের শরীরের ৭-৮টি কোপের আঘাত। খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা মর্গে ছুটে আসেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান বলেন, বেলাল মসজিদের দানবাক্সের টাকার হিসাব রাখতেন। এ ছাড়াও মসজিদের অধীনে থাকা দোকানগুলোর ভাড়া সংগ্রহ করতেন। এসব বিষয়ে দ্বন্দ্ব থেকেও এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে। তবে ধর্মীয় মতাদর্শের কারণটিও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।

সর্বশেষ খবর