মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

আঙ্গুলের ছাপের অবৈধ ব্যবহারে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা

আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাতে ছয় মাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে নেওয়া আঙ্গুলের ছাপের অপব্যবহার করলে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরকে। তবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনে গ্রাহকরা আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার কারণে কোনো ঝুঁকিতে পড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছে মন্ত্রিসভা। একই বৈঠকে নগরীর আবাসিক এলাকার প্লট ও ভবন থেকে অননুমোদিত সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাতে ছয় মাস সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো না সরালে সেগুলো উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে এসব কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গতকালের বৈঠকে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি নিয়ে জনগণের সংশয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রিসভা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেছে, বলেছে ভয়ের কিছু নেই। আমরা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েছি। আপনারাও (সাংবাদিক) জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারেন— ফিঙ্গার প্রিন্টের কারণে কারও ক্ষতি হবে না। তিনি জানান, এটার যদি মিসইউজ (অপব্যবহার) হয়, তাহলে অপারেটরদের জন্য বড় শাস্তি আছে। তাদের ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী অপারেটররা কোনো আইন ভঙ্গ করলে তাদের ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। কোন আইনে মোবাইল অপারেটরদের ওই জরিমানা করা যায় জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অপারেটরদের দেওয়া লাইসেন্সেই এ বিষয়ে বলা আছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিম পুনঃ নিবন্ধনে চারটি আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়। নাগরিকদের আঙ্গুলের যে ছাপ জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিতে আছে, তা মিলিয়ে দেখতেই এ ব্যবস্থা। মোবাইল অপারেটররা এই ছাপ সংরক্ষণ করবে না। নাগরিকদের কোনো হয়রানির শিকার হওয়া, এই ফিঙ্গার প্রিন্ট অন্য কোনো কাজে লাগানো বা তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে টানাটানির কোনো সম্ভাবনা নেই।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায়  বায়োমেট্রিক পদ্ধতির বিষয়টি উত্থাপন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চান ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের কাছে।

ছয় মাসের মধ্যে আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সরাতে হবে : রাজধানীর আবাসিক এলাকা থেকে অনুমোদনহীন অবৈধ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা সরে না গেলে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আবাসিক এলাকার অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ছয় মাসের মধ্যে রাজউক, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমন্বিত অভিযান পরিচালনারও সিদ্ধান্ত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আজ থেকেই ছয় মাসের সময় গণনা শুরু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া না হলে নির্ধারিত সময়ের পর প্রথমে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেওয়া হবে, ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো কর ও ভ্যাট নেওয়া হবে না। পরবর্তীতে এক মাসের মধ্যে সম্মিলিতভাবে রাজউক, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্টরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালন করবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভার ২০১৫ সালের ৮ জুনের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগ তাদের প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ তুলে ধরে। এগুলো হচ্ছে— আবাসিক এলাকায় পার্কিংয়ের জন্য রাখা জায়গায় কোনো স্থাপনা থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। কোনো বার (পানশালা) থাকলে সেই বারের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। নতুন করে আবাসিক এলাকায় কোনো বারের লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। গেস্ট হাউস ও আবাসিক হোটেল থাকলে তা সরাতে হবে। এই সিদ্ধান্তগুলো আগামী ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। অনুমতি নিয়ে করা বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোও পর্যায়ক্রমে সরাতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আবাসিক এলাকার চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে এ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মানুষকে বুঝিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। কোনো রকম আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। এ ছাড়া গতকালের বৈঠকে মন্ত্রিসভা কোড অব সিভিল প্রসিকিউটর (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০১৬ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।

এদিকে বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তনু হত্যার বিচারের প্রসঙ্গটি উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রচলিত আইনেই তনু হত্যার বিচার সম্ভব। আইন প্রণয়ন নিয়ে সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির একটি মন্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রক্রিয়া ও ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এতে সংসদ সদস্যদেরও ভূমিকা থাকে।

সর্বশেষ খবর