বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে তথ্য

প্রতিদিন ডেস্ক

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে তথ্য

গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টিকারী ‘পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি’র তথ্য ফাঁস নয়, তা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা হয়েছে। আর এ দাবি করেছেন পানামার যে আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের তথ্য ফাঁস হয়েছে সেই মোস্যাক ফনসেকার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন র?্যামন ফনসেকা।

এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে কঠোর সমালোচনা শুরু হলেও কেউ হ্যাকিং নিয়ে কথা বলছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি দাবি করেছেন, বিদেশি সার্ভার থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে হ্যাক করা হয়েছে। এজন্য তারা গত সোমবার পানামার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন, সরকারি একটি সংস্থাও এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তিনি এএফপিকে জানান, ‘তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে আমাদের কাছে কারিগরি প্রতিবেদন আছে। সেখানে দেখা গেছে, বাইরে থেকে আমাদের সার্ভার হ্যাক করা হয়েছে।’ তবে কোন দেশ থেকে হয়েছে, তা তিনি বলেননি। অন্যদিকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফনসেকা বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বৈধ। কোনো গোপন কাজ করি না। আর তথ্য প্রকাশ হওয়ার ঘটনাটি ফাঁস নয়, হ্যাক।’ কোম্পানির যেসব ইমেইল ও তথ্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোকে ‘প্রসঙ্গের বাইরে’ ও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও দাবি তার। একই সঙ্গে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের কাছে থাকা কোনো তথ্য নষ্ট করা হয়নি এবং প্রতিষ্ঠানটি কাউকে কর ফাঁকি বা মুদ্রা পাচারে সহায়তা করেনি। ফনসেকা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে ৫০০ কর্মী আছেন। এর মধ্যে ৩০০ জনই পানামায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এ ঘটনায় আমরা (মোস্যাক ফনসেকা) কোনোভাবেই দোষী সাব্যস্ত হব না।’ এদিকে মোস্যাক ফনসেকার নথি বের হওয়ার পরপরই ফ্রান্স সরকার পানামার সেন্ট্রাল আমেরিকান নেশন ব্যাংককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। প্রতিবাদে পানামাও ফ্রান্সের ব্যাংকগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে বলে জানান পানামার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র। চলতি সপ্তাহে গণমাধ্যমে আসা মোস্যাক ফনসেকার এসব নথিতে কেবল রাজনীতিবিদ নয়, ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, বিশ্বখ্যাত ফুটবলার, বলিউড তারকাসহ অনেকেরই গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, সে তথ্য বেরিয়ে এসেছে এসব নথিতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে এ ঘটনায় নাম আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পদত্যাগ করেছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ড গুনলাগসন। ফাঁস হওয়া প্রতিষ্ঠানটির মক্কেলদের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য রয়েছেন : মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। নথিগুলোয় বিলিয়ন ডলার পাচারের একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যার সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর নাম এসেছে। এ ছাড়া রয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান, আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বাবা প্রয়াত ইয়ান ক্যামেরন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ছেলে মোহাম্মদ নাজিব, সাবেক চীনা প্রধানমন্ত্রী লি পেংয়ের মেয়ে লি শিয়াওলিন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের তিন ছেলেমেয়ে— মরিয়ম সফদার, হাসান নওয়াজ শরিফ ও হুসাইন নওয়াজ শরিফ। এমনকি ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি এবং বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন ও তার পুত্রবধূ ঐশ্বরিয়া রাইও মোস্যাক ফনসেকার সেবা নিয়েছেন। তবে অভিযুক্তরা এর মধ্যে সবাই কর ফাঁকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টি তদন্তে সুপ্রিমকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে কমিটি করেছেন। ব্রিটেনে আমিরাত শাসকের সম্পদের পাহাড় : আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান তথাকথিত বা অফশোর ব্যবসার মাধ্যমে ব্রিটেনে প্রায় ১২০ কোটি পাউন্ড বা ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি সরিয়েছেন।

কর স্বর্গের দেশে টাকা রাখার কারণ কী? : বিশ্লেষকরা বলছেন, কর ফাঁকি দিতে এবং চুরির টাকা লুকিয়ে রাখতে বেছে নেওয়া হচ্ছে ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ বা ‘কর স্বর্গ’ দেশগুলোকে। কিন্তু সম্পদশালীরা কেন তাদের অর্থ সেখানে রাখছেন? লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অর্থনীতির শিক্ষক মুশতাক খানের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, অনেক ছোট ছোট দেশ আছে যেখানে করের হারই শুধু কম নয়, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও বিধিনিষেধ অনেক শিথিল। এসব দেশে টাকা নেওয়া এবং রাখা আকর্ষণীয় দুটি কারণে। প্রথমত, অনেক বৈধ কোম্পানি তাদের আন্তর্জাতিক কর কমানোর জন্য এসব দেশে টাকা জমা রাখে। এটা বেআইনি নয়। কিন্তু তার ভাষায় এটা নৈতিকভাবে সমালোচনাযোগ্য। কারণ যে দেশে তারা টাকা বানাচ্ছে সেসব দেশে কর না দিয়ে এমন সব দেশে রাখছে যেখানে তাদের কম কর দিতে হয়। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি কিছু লোক সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে টাকা করেছে, লুট করেছে বা চুরি করেছে। তারাও এসব স্থানে টাকা রাখে। তাদের উদ্দেশ্য শুধু কর কম দেওয়া নয়, তাদের উদ্দেশ্য চুরি করা টাকাটা লুকিয়ে রাখা। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।

সর্বশেষ খবর