রবিবার, ১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
দিনদুপুরে দোকান থেকে বের করে কুপিয়ে পালিয়ে যায় মোটরসাইকেলে আসা তিন খুনি

এবার টাঙ্গাইলে খুন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

এবার টাঙ্গাইলে খুন

নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দার

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে মন্তব্যের জন্য টাঙ্গাইলে জেল খেটে আসা নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দার (৫০) নামের এক দর্জি ও থান কাপড় ব্যবসায়ী নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। জেলার গোপালপুর উপজেলার ডুবাইল কালীবাড়ি বাজারে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ডুবাইল গ্রামের নলিনী কান্ত জোয়ার্দারের ছেলে। হত্যাকাণ্ডটি জঙ্গি সম্পৃক্ততা না পূর্বশত্রুতা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট থেকে শুরু করে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ভিন্ন মতাবলম্বী এবং সমকামী অধিকার কর্মীদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, একই ভাবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়। গত এক বছর ধরে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকবারই হামলাকারীদের মোটরসাইকেলে আসতে এবং চাপাতি দিয়ে খুন করে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।

এই হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের দায়িত্ব স্বীকারের বার্তা আসার খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুপুরে এই হত্যাকাণ্ডের পর সন্ধ্যায় সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে এই খবর দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’র মাধ্যমে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় হিন্দু দর্জিকে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বাংলাদেশে এসব হত্যাকাণ্ডের পর আল-কায়েদা ও আইএসের নামে যেসব বার্তা এসেছিল, তার কয়েকটিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘটনায়ও দায় স্বীকার করতে দেখা গেছে।

তবে আইএস ও আল-কায়েদার দায় স্বীকারের এসব বার্তা উড়িয়ে দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, দেশীয় জঙ্গিরাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর নাম দিয়ে ইন্টারনেটে বার্তা ছাড়ছে। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) আসলাম খান জানান, ২০১২ সালে ২ মে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামকে নিয়ে কটূক্তি করায় তার বিরুদ্ধে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। পরে দৈনিক ইনকিলাব-এর স্থানীয় প্রতিনিধি (গোপালপুর উপজেলা) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় তিনি জেলও খেটেছেন। কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুল জলিল জানান, নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দার ডুবাইল বাজারের একটি দোকানঘরে থান কাপড় বিক্রি ও থান কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরির কাজ করতেন। দুপুরে একটি মোটরসাইকেলযোগে তিন যুবক ডুবাইল বাজারে নিখিলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আসে। পরে নিখিলের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে ডেকে নিয়ে দোকানের অদূরে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। আলাপচারিতার একপর্যায়ে অতর্কিতে পেছন থেকে নিখিলের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নিখিলের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। লাশের পাশে বোমা সাদৃশ্য একটি ব্যাগ পাওয়া যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ ও হত্যার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে। এলাকায় পুলিশ, র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পৌঁছেছেন। হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে নিখিলের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে মামলার বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, কী কারণে কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা অনুসন্ধান চলছে। কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত কিনা দোষীদের গ্রেফতারের পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নিহত নিখিল জোয়ার্দারের আত্মীয় গৌতম চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মূলত তাকে জমি-জমা বিরোধের জের ধরে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। গোপালপুর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খিস্ট্রান পরিষদের সভাপতি হরিপদ দে মণ্ডল বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। কে বা কারা নিখিলকে হত্যা করেছে দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর