বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন জেলায় নিহত ৪

তারা জঙ্গি ও ডাকাত, একজন রাবি শিক্ষক হত্যায় জড়িত : পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, রাজশাহী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ঢাকা, রাজশাহী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন ঢাকায় তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইসমাইল ও সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা ওরফে কামাল, রাজশাহীতে জামাল উদ্দিন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রুবেল মিয়া। পুলিশ বলছে, ঢাকা ও রাজশাহীতে নিহত তিনজনই নিষিদ্ধ জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহত যুবক রুবেল মিয়া (২৮) ডাকাত দলের সর্দার। আত্মরক্ষার স্বার্থেই পুলিশ সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হন। সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং সিটিটিসির দুটি দল গতকাল ভোর ৪টার দিকে পল্লবীর কালশী লোহার ব্রিজের পাশে অভিযান চালায়। তাদের কাছে খবর ছিল সশস্ত্র জঙ্গিরা সেখানে মিলিত হবে। অবস্থান টের পেয়ে জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি করে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিনটি গুলি ও তিনটি হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে। মনিরুল বলেন, বন্দুকযুদ্ধে আহত দুজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইসমাইল ও সুলতান মাহমুদ ওরফে রানা ওরফে কামাল। বন্দুকযুদ্ধে আহত দুই পুলিশ সদস্যকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মনিরুল বলেন, রাবি শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যায় তারেক হোসেন মিলু ওরফে ইসমাইল প্রধান ভূমিকায় ছিলেন। তার বাড়ি জয়পুরহাট জেলায়। শিয়া মসজিদে হামলাকারী ছিলেন সুলতান মাহমুদ। তার বাড়ি দিনাজপুরে।

রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জামাল উদ্দিন (২৫) নিহত হন। পুলিশের দাবি, জামাল জেএমবির আত্মঘাতী টিমের সদস্য। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর কালিনগর গ্রামের তাবজুল হকের ছেলে। জামাল বাগমারায় মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত তারেকের সহযোগী। আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলাকারীদেরও একজন তিনি।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ফরহাদ হোসেন জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি বিশেষ টিম জামাল উদ্দিনকে গোদাগাড়ী উপজেলার বাবু ডাইং এলাকা থেকে আটক করে। জামালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রাতেই তাকে নিয়ে জেএমবির অপর সদস্যদের গ্রেফতার করতে যায় পুলিশ। রাত ৩টার দিকে গোদাগাড়ীর ফরাদপুর এলাকায় জেএমবির সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রথমে ককটেল হামলা করে এবং পরে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জামাল নিহত হন। অন্যদিকে গত বছর ২৫ ডিসেম্বর বাগমারায় আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত তারেক আজিজের মা তাসলিমা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারেকের বাবা আবু সালেক সেনাসদস্যের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেন। সেই সূত্রে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তারেক। পড়াশোনার জন্য পলিটেকনিকে ভর্তির পর কিডনিজনিত অসুস্থতায় ভুগতে থাকেন তিনি। আর এ সময়ই তাকে জেএমবির আত্মঘাতী হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। গতকাল পুলিশ তসলিমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তসলিমা বেগম জানান, তার বড় ছেলে কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। ছোট ছেলে তারেকও একই রোগে ভুগছিলেন। তারেকের সঙ্গে তার শেষ কথা হয় গত বছর ডিসেম্বরে। তার ধারণা, চিকিৎসার জন্য অর্থ দেওয়ার প্রলোভনে তারেককে দলে ভেড়ায় জেএমবি। এরপর কাজে লাগায় বাগমারার আহমদিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ জানায়, সোমবার দিবাগত গভীর রাতে নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের তোল্লাপাড়া এলাকায় একদল ডাকাত সড়কে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কমপক্ষে ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা ১৯ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির মধ্যে ডাকাত সর্দার রুবেল মিয়া আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তার বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় ডাকাতির অভিযোগে আটটি ও বিজয়নগর থানায় চারটি মামলা রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশে তৈরি পাইপগান, চার রাউন্ড গুলি ও রড এবং কিরিচ উদ্ধার করেছে। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল কাদের জানান, ডাকাত সদস্যের ছোড়া গুলিতে তিনিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অন্যরা হলেন এএসআই আশরাফুল, কনস্টেবল রাখাল ও আবু তাহের। নিহত রুবেল মিয়া নাসিরনগর উপজেলার নুরপুর গ্রামের ফয়েজ মিয়ার ছেলে। এর আগে ২৬ মে ভোররাতে জেলার বিজয়নগরে শশই নামক স্থানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মহব্বত আলী (২৮) নামে এক যুবক নিহত হন। পুলিশের দাবি, নিহত ওই যুবকও আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন।

সর্বশেষ খবর