সেহেরি ও ইফতার রোজার দুই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। মহানবী (স.) সেহেরি খাওয়াকে মুস্তাহাব বা খুবই পছন্দনীয় কাজ বলে অভিহিত করেছেন। বস্তুত রোজা রাখার জন্য শেষ রাতে কিছু পানাহার করা চাই। নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সেহেরি খাও। সেহরি খাওয়ায় নিশ্চয়ই বরকত রয়েছে। তিনি বলেছেন, যে লোক রোজা রাখতে চায়, তার কিছু খেয়ে সেহেরি পালন করা কর্তব্য। তিনি আরও বলেছেন, মুসলমানদের ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের রোজা রাখার একটি পার্থক্য হলো সেহেরি খাওয়া। অর্থাৎ মুসলমানরা সেহেরি খেয়ে রোজা রাখে আর অমুসলমানরা সেহেরি না খেয়ে রোজা থাকে।
কোরআন মজিদের ২য় সুরা বাকারার ১৮৭ সংখ্যক আয়াতে বলা হয়েছে, ... পানাহার কর যে পর্যন্ত প্রত্যুষে কালো রেখা হতে সাদা রেখা প্রকাশ হয়, অর্থাৎ সুবেহ সাদেক উদয় হওয়া পর্যন্ত সেহেরি খাওয়ার শেষ সময়। এই শেষ সময় পর্যন্ত সেহরি খাওয়া বিলম্ব করাই সুন্নত-রসুলের আদর্শ। তিনি সেহেরি খাওয়ার জন্য যেমন তাগিদ দিয়েছেন তেমনি তা বিলম্বিত করার জন্য শেষ মুহূর্তে খাওয়ার জন্যও উৎসাহিত করেছেন। সুবেহ সাদিক উদয় হওয়ার বহু আগে প্রায় মধ্যরাতে সেহরি খাওয়া ইসলামে পছন্দনীয় কাজ নয়। তাবরানি সংকলিত হাদিস গ্রন্থের একটি হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে, রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা রাতের শেষ দিকে সেহেরি গ্রহণ কর। আগেই বলা হয়েছে সেহেরি খাওয়া সুন্নতে মোস্তাহাব, ফরজ নয়। কোন কারণবশত সেহেরি খাওয়া সম্ভব না হলে ফরজ রোজা থাকা হতে বিরত থাকা বিধেয় নয়। হজরত আবুজর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন- আমার উন্মত যতদিন ইফতার ত্বরান্বিত করবে এবং সেহেরি বিলম্বিত করবে ততদিনে তারা কল্যাণকর হয়ে থাকবে। সূর্যাস্তের মুহূর্তে ইফতার করার সময়। এ মুহূর্ত উপস্থিত হওয়া মাত্রই রোজা খুলে ফেলা কর্তব্য। ইফতার করতে অকারণ বিলম্ব হওয়া উচিত নয়। যদি কেউ এ বিলম্বকে অধিক সওয়াব পাওয়ার উপায় কিংবা অধিক তাকওয়া দেখানোর শামিল মনে করেন তা আদৌ সঠিক নয়। ইফতার ত্বরান্বিত করা কেবল রসুল (সা.) এর পছন্দ নয়, আল্লার কাছেও তা অধিকতর প্রিয়। হাদিসে কুদসিরূপে উল্লেখিত হয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমার কাছে ওই ব্যক্তি সর্বাধিক প্রিয় যে শিগগির ইফতার করে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, রসুলে করিম (স.) বলেছেন, আমার উম্মতকে রমজান মাসে পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করা হয়, যা আগের কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি। সে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য হলো— (১) রোজাদারের মুখনিসৃত গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধি হতেও উত্তম; (২) যতক্ষণ না ইফতার করে ফেরেশতারা তাদের জন্য ক্ষমা চাইতে থাকে; (৩) আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক দিন তার জান্নাতকে সুসজ্জিত করে রাখেন; অতঃপর জান্নাতকে (সম্বোধন করে) বলতে থাকেন, আমার নেক বান্দাদের বৈষয়িক শ্রম, দায়িত্ব ও কষ্ট নির্যাতন শিগগিরই দূর করা হবে। (৪) তারা আমার কাছে শুভ পরিণতি পাবে। (৫) এ মাসে প্রধান দুষ্কৃতকারী শয়তানদের রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হবে। ইফতারের সময় ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’ র্অথাৎ হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি, আপনার রিজিকের দ্বারা ইফতার করছি’ এই দোয়া পড়া সুন্নত। হজরত সালমান ফারেসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গোনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না।
সিয়াম সাধনার ফলে রোজাদারের জীবনযাপন প্রণালি শৃঙ্খলামণ্ডিত হয়ে ওঠে। যথামুহূর্তে ইফতার করা এবং শেষ রাতে সেহরি খাওয়া সেই শৃঙ্খলা বিধান ও নিয়মতান্ত্রিকতারই অংশ। ইফতার করার আগে ইফতার সামগ্রী সামনে নিয়ে সময়ের অপেক্ষা করার মধ্যে ধৈর্যশীলতা ও নিয়মনিষ্ঠার পরিচয় নিহিত। সেহরি ও ইফতার উভয়ই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে স্বাস্থ্যসম্মত ও বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ।