বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

অপচয় অপব্যয়

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

অপচয়-অপব্যয় ব্যষ্টি ও সমষ্টির সামগ্রিক অবয়বে অনির্বচনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্থান-কাল-পাত্রনির্বিশেষে এ কথা সর্বজনবিদিত যে, সময়, সম্পদ ও সুযোগের সুষম ব্যবহারে সাফল্য সুনিশ্চিত হয়। আল কোরআনে অপচয়-অপব্যয় ও অমিতাচার থেকে দূরে থাকার জন্য বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা মানুষকে দেখানোর জন্য তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে না আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন না আর শয়তান কারও সঙ্গী হলে সে সঙ্গী কত মন্দ।’ (সূরা নিসা, আয়াত ৩৮)। ‘অপচয় করবে না, কারণ আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আল আনয়াম, আয়াত ১৪১)। ‘হে বনি আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করবে। আহার করবে ও পান করবে কিন্তু অমিতাচার করবে না। তিনি অমিতাচারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ, আয়াত ৩১)। ‘আত্মীয়স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও পর্যটককেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৬-২৭)। ‘এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন তারা অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।’ (সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৭)। অপব্যয়ের ফলে স্বভাবত অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায্য দায় পরিশোধে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বলেই ব্যয় ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুষম অবস্থা অবলম্বনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সম্পদ সসীম। চাহিদা অসীম। সসীম সম্পদের সুষম ব্যবহারের দ্বারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাহিদা মেটানো যেখানে জরুরি সেখানে অপব্যয়ের অবকাশ নেই। ব্যষ্টির অর্থনীতিতে অপব্যয় অভাব-অনটনকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একই কথা। অপব্যয়-অপচয়ে জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়, বৈষম্য প্রকাশ্য হয়ে ওঠে ভোগ ও বণ্টন প্রক্রিয়ায়। পানাহারের ক্ষেত্রেও মধ্যপন্থা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ক্ষুধা ও প্রয়োজনের চেয়ে অধিক খাদ্য গ্রহণ অনুচিত। ফিকাহবিদরা উদরপূর্তি ও অস্বাভাবিক ভক্ষণ করাকে নাজায়েজ লিখেছেন। হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘বেশি পানাহার থেকে বেঁচে থাকো। কারণ অধিক পানাহার দেহকে নষ্ট করে, নানান রোগের জন্ম দেয় এবং কর্মে অলসতা সৃষ্টি করে। পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। এটা দৈহিক সুস্থতার পক্ষে উপকারী এবং অপব্যয় থেকে দূরবর্তী।’ কোরআনে তাদের শয়তানের দোসর সাব্যস্ত করা হয়েছে যারা আল্লাহর পথে নিজেরাও ব্যয় করে না এবং অন্যকেও ব্যয় না করার অনুপ্রেরণা জোগায়, অথচ তারা অপব্যয় করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। ওয়াজিব হকের ক্ষেত্রে শৈথিল্য ও কার্পণ্য প্রদর্শন করা যেমন দূষণীয় তেমন লোক দেখানোর জন্য ও উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ব্যয় করাও নিতান্ত মন্দ কাজ। যারা একান্তভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ব্যয় না করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে তাদের আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। হাদিসে এমন কাজকে শেরেকি বলেও অভিহিত করা হয়েছে। মুসনাদে আহমাদে সংকলিত এবং শাদ্দাদ ইবনে আওস বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ল সে শেরেকি করল। যে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে রোজা রাখল সে শেরেকি করল এবং যে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সদকা-খয়রাত করল সে শেরেকি করল।’ (মুসনাদে আহমদ)।

লেখক : সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

সর্বশেষ খবর