বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

দোয়া পাঠ ও প্রার্থনা

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

মহা বরকত ও কল্যাণের মাস মাহে রমজানে বেশি বেশি দোয়া পাঠ ও প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে মাগফিরাত ও রহমত কামনা করা উত্তম। মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে তার বান্দা যে প্রার্থনা পেশ করবে তার বাণী ও বিষয় রাহমানুর রাহিম নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন আল কোরআনে। কোরআনে যেসব মোনাজাত    বিভিন্ন ক্ষেত্র বা উপলক্ষে বিবৃত হয়েছে তার মধ্যে প্রার্থনার বিভিন্ন আঙ্গিক, ভাব, ভাষা প্রকাশ পেয়েছে। আল কোরআনের উদ্বোধনী সূরা ফাতিহা সেরা মোনাজাতের মডেল। আর এ কারণে মিরাজুল মুমিনিন হিসেবে বিবেচিত নামাজের প্রতি রাকাতে এ সূরা পাঠ করতে হয়। এ সূরার ৭টি আয়াতের মধ্যে বিশ্ব প্রতিপালকের প্রশংসা, তাঁর অসীম গুণাবলি ও বিচার দিনের মালিক হিসেবে উল্লেখের পর ‘দ্যুলোকে ভূলোকে সবারে ছাড়িয়া’ একমাত্র তাঁর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে তার কাছে উত্তম পথে চালিত করার আকুতি এবং ‘যে পথে রয়েছে ভ্রান্তি পরিতাপ’ সে পথগামী না করার প্রার্থনা রয়েছে। কোরআনের শেষ দুই সূরা ফালাক ও নাসেও ব্যবহারিক জীবনে পারস্পরিক হিংসা, দ্বেষ-বিদ্বেষ থেকে এবং মন্দপ্রবণতা ও কুমন্ত্রণাদাত্রী শয়তান, মানুষ ও জিনের ষড়যন্ত্র থেকে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

আল কোরআনে সওগাত হিসেবে উল্লিখিত মোনাজাতগুলোর কয়েকটি : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদের অপরাধী করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের ওপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের ওপর অর্পণ করো না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদের ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের জয়যুক্ত কর।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৬)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলঙ্ঘনপ্রবণ করো না এবং তোমার কাছ থেকে আমাদের করুণা দাও, তুমিই মহাদাতা।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত ৮)। ‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে লও; যাকে ইচ্ছা তুমি পরাক্রমশালী কর, আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর। কল্যাণ তোমার হাতেই। তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তুমিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিণত কর; তুমিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত ২৬-২৭)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের (পিতা-মাতার) প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমার প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৪)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমার জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর।’ (সূরা তোয়াহা, আয়াত ১১৪)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর যারা আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ কর।’ (সূরা ফুরকান, আয়াত ৭৪)। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর, আমার জন্য আমার সন্তান-সন্ততিদের সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সূরা আহকাফ, আয়াত ৪৬)।

লেখক : সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর